নাগরিকত্ব আইন : রোহিঙ্গা তাড়াচ্ছে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

রোহিঙ্গা

ভারতের সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) পাস হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরে এটি কার্যকর হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় এক মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, নতুন আইনে সংখ্যালঘু ছয়টি সম্প্রদায়ের নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা দেয়া হলেও মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা এই সুযোগ পাবেন না। নতুন আইন পাস হয়ে যাওয়ায় সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো।

গতকাল শুক্রবার কাশ্মীরের শ্রীনগরে সরকারি এক অনুষ্ঠানে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে আলোচনার সময় এসব কথা বলেন মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ।

তিনি বলেন, ‘সংসদে বিল পাশ হয়ে যাওয়ার দিন থেকেই জম্মু-কাশ্মীরে সিএএ কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে কোনও যদি, কিন্তু নেই। এবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে সরকার।’

পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য পেরিয়ে কীভাবে রোহিঙ্গারা দেশটির উত্তরাঞ্চলের কাশ্মীরে পৌঁছাল সেব্যাপারে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এই মন্ত্রী।

জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা কি হবে কেন্দ্রীয় সরকার এখন সেবিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। প্রয়োজনে বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র দেয়া হবে। কারণ নতুন নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোনো কিছুই বলা হয়নি।

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান, শিখ এবং পার্সিদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা রয়েছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।

জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে। তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হবে। প্রয়োজনে বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্রও করা হবে। কারণ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদর কোনও সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়নি। প্রতিবেশি তিন দেশে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার যে ছয়টি সম্প্রদায়কে নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা তাদের মধ্যে পড়ে না।’

তিনি বলেন, তারা (রোহিঙ্গারা) সংখ্যালঘু ছয়টি সম্প্রদায়ের মধ্যে পড়ে না। এমনকি তারা প্রতিবেশি এই তিনদেশের মানুষও নয়। রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে এসেছেন এবং সেখানেই তাদের ফেরত পাঠানো হবে।

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার বলছে, জম্মু এবং সাম্বা জেলায় রোহিঙ্গা মুসলিম এবং বাংলাদেশিসহ মোট ১৩ হাজার ৭০০ বিদেশি রয়েছেন। ২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ দুই জেলায় রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত ১১ ডিসেম্বর ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হয়ে যাওয়ার পর দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কিত এই নাগরিকত্ব আইনের বিরোধীতায় শুরু হওয়া বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি, জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল প্যানথারস পার্টি (জেকেএনপিপি), বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় সমাজসেবকসহ দেশটির অন্যান্য বেশ কিছু সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়ে আসছে।

সূত্র : ইন্ডিয়া ট্যুডে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে