বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে ছাত্রলীগ একটি আবেগ ও চেতনার নাম। বাংলা ও বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেছেলেন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ৫৮’র আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফার পক্ষে গণ-অংশগ্রহণের মাধ্যমে মুক্তির সনদ হিসেবে এই দাবিকে প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনা, ৭০’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভ এবং ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পরাধীন বাংলায় লাল সবুজের পতাকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এই ছাত্র সংগঠনটি।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অংশ নেয় ছাত্রলীগ। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট খন্দকার মুস্তাক-জিয়ার চক্রান্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর এই ছাত্র সংগঠনটিই রাজপথে সর্বপ্রথম প্রতিবাদ মিছিল বের করে। জাতির পিতা হত্যার বিচার চেয়ে আন্দোলন সংগ্রামের কারণে তৎকালীন সময়ে অনেক ছাত্রনেতা স্বৈরচার সরকারের রক্তচক্ষু হয়ে নির্মম নির্যাতন ও হত্যকাণ্ডের শিকার হন। তাছাড়া বহু ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে কারাগারে বন্দি করা হয়।
১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে স্বাধীনতার চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক ধারা পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের সূচনা করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী)। ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনন্য ভূমিকা পালন করে ছাত্রলীগ। ১৯৯৪ সালে সশস্ত্র হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগের হাতে বইখাতা তুলে দিয়ে ইতিহাসের ধারায় পরিবর্তন এনে দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষা ও শিক্ষা সম্পর্কিত আন্দোলনের পাশাপাশি ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও আটানব্বই-এর দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় রুটি, স্যালাইন প্রকল্পের অবিসংবাদিত চ্যাম্পিয়ন ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াত জোট সরকারের প্রগতি-শান্তি-গণতন্ত্রবিনাশী প্রতিটি আঘাত সামলে নিতে হয়েছে সংগঠনটিকে। এক/এগারো-পরবর্তী গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন এবং ছাত্র-আন্দোলনে চালকের ভূমিকায় ছাত্রলীগ সচেষ্ট থেকেছে সর্বদা।
নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করে আজ ৪ জানুয়ারি ২০২০ সালে এসে গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করছে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও প্রচীন ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য গত এক দশকে ছাত্রলীগ নানা কারণে আলোচিত সমালোচিত ছিল। আমরা আসা করব ছাত্রলীগ তাদের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে জননেত্রী শেখ হাসিনার শক্তি হিসেবে কাজ করবে এবং ইতিবাচক ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে সমাজ সংস্কারে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করবে। সুন্দর ও শুভ হোক ছাত্রলীগের ভবিষ্যৎ পথচলা।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।