রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলা করেন ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর বাবা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহান হক।
তিনি বলেন, মামলার এজাহারে মেয়েটিকে একজন ধরে নিয়ে ধর্ষণ করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ধর্ষণের ঘটনাস্থল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই এলাকাটি একটু গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল এলাকা। ঘটনাস্থলটি আমরা এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।’
এর আগে রোববার রাতেই মেয়েটির বাবা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। প্রাথমিক তদন্ত ও যাচাই-বাছাই শেষে দুপুরে অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
গুলশান বিভাগের একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গতকাল রাত থেকে অভিযুক্তদের খুঁজতে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ, মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশসহ পুলিশের একাধিক ইউনিট। এছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে ধর্ষণের আলামত সংগ্রহের কাজ চলছে।
তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন কেউ থাকলে আমরা অপরাধীকে চিহ্নিত করব। প্রয়োজনে অপরাধীর চেহারা শনাক্তে ওই ছাত্রীর সহযোগিতা নেয়া হবে।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেখ) হাসপাতালে এসেছেন ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীর মামা। তিনি এনবিআরের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আছেন।
ভাগ্নির সঙ্গে কথা বলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার ভাগ্নির বান্ধবীর বাসা রাজধানীর শেওড়ায়। সেখানে যাওয়ার উদ্দেশেই সে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উঠেছিল। তবে ভুল করে শেওড়ার আগে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কাছে বাস থেকে নেমে পড়ে। আর সেখানেই কোনো একটি স্থানে ধর্ষণের শিকার হয়।
ধর্ষণের স্থান সম্পর্কে ছাত্রী কিছু জানিয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে ওই এলাকা চেনে না। তাই ঠিকমতো স্থান বলতে পারেনি। তবে সে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কাছে নেমে পড়েছিল। হাসপাতালের আশপাশেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে সে।
ট্রমা-শ্বাসকষ্টে ভুগছেন ধর্ষণের শিকার ঢাবির সেই ছাত্রী
ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ওই ছাত্রী ট্রমায় ভুগছেন। তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিতে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন।
সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ওই ছাত্রী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে তিনি সাংবাদিকদের একথা জানান।
ঢামেক পরিচালক বলেন, ‘মেয়েটির মেন্টালি ট্রমা ছাড়াও শারীরিক কিছু আঘাত রয়েছে। পাশাপাশি সে কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করেছে এবং আমরাও কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছে। এই অবস্থায় তার সঙ্গে দেখা করা, কথা বলা তার জন্য অস্বস্তিকর। কেউ যেন আমরা তার কাছে না যাই।’
ধর্ষণের আলামতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের বিষয়টি ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগ দেখছে। পাশাপাশি তাকে ঢামেকের নাক কান গলা বিভাগ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তার যেহেতু শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, সেজন্য রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগসহ আরও কিছু বিভাগের ডাক্তারদের নিয়ে একটি বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
পরে ঢামেক সূত্র জানায়, এ ঘটনায় ঢামেকের গাইনি বিভাগের প্রধান সালমা রউফকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নেমে যাওয়ার পর তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন ঢাবির ওই ছাত্রী। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে ঢাবির নিজস্ব বাসে রওনা দেন তিনি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নামেন।
এরপর একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি তার মুখ চেপে ধরে সড়কের পেছনে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। ধর্ষণের পাশাপাশি তাকে নির্যাতনও করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে।
ধর্ষণের এক পর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। রাত ১০টার দিকে নিজেকে একটি নির্জন জায়গায় আবিষ্কার করেন ওই ছাত্রী। পরে সিএনজি নিয়ে ঢামেকে আসেন। রাত ১২টার দিকে ওই ছাত্রীকে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করান তার সহপাঠীরা।