রাজধানীতে স্বামীকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কার্যালয়ে আটকে পোশাককর্মীকে ধর্ষণ

মহানগর প্রতিবেদক

মো. জনি দেওয়ান ও মো. আতিক দেওয়ান
ছবি : সংগৃহিত

রাজধানীতে কাফরুলের ইমাননগরে থার্টিফার্স্ট নাইটে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কার্যালয়ে স্বামীকে আটকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে এক পোশাককর্মীকে (২৭) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটির দুই কর্মী ছাড়াও এক নিরাপত্তাকর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত তিনজন হলেন- জনি দেওয়ান ওরফে মুরগি জনি, আতিক দেওয়ান ও জাহাঙ্গীর আলম। প্রথম দুজন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী।

জানা যায়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গত শনিবার রাতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী। শারীরিক পরীক্ষার জন্য তাকে গতকাল রোববার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ইতোমধ্যে নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলার পর বিচারক তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। অন্যদিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওই দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

বাদী গণমাধ্যমকে জানান, তার স্বামী নির্মাণশ্রমিক, থাকেন ইমাননগরে। থার্টিফার্স্ট নাইটে তারা বেড়াতে বের হন। ভোর ৪টার দিকে নাশতা করতে মিরপুর-১৩ নম্বরের ওপেক্স গার্মেন্টসের সামনে যান। সেখানে কোনো হোটেল/রেস্তোরাঁ খোলা না পেয়ে জব্বারের চিপা নামের একটি গলি ধরে হাঁটছিলেন তারা। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী মুরগি জনি ও আতিক দেওয়ান তাদের পথ আটকে প্রশ্ন করেন, এত রাতে রাস্তায় কেন?

তখন তার স্বামী জানতে চান, রাতে হাঁটা নিষেধ কিনা? এমন প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন জনি ও আতিক। স্বামী-স্ত্রীকে এক প্রকার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান পাশের স্বেচ্ছাসেবক লীগ কার্যালয়ে। সেখানে তার স্বামীকে বেদম মারধর করা হয়; জানতে চাওয়া হয়, তাদের বিয়ের কাবিননামা আছে কিনা।

তরুণী জানান, সঙ্গে নেই, বাসায় আছে। মুরগি জনি তখন তার স্বামীকে সেখানে আটকে রেখে তরুণীর সঙ্গে তাদের বাসার দিকে রওনা হন কাবিননামা দেখার জন্য। সঙ্গে ছিলেন নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলমও।

তরুণী বাসায় তাদের কক্ষে প্রবেশ করতেই জনিও প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর তরুণীর মুখ চেপে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা চালালে তিনি চিৎকার করেন। জনি তখন ওই তরুণীকে হুমকি দেন, রাজি না হয়ে চিৎকার করলে ক্লাবে বেঁধে রেখে আসা তার স্বামীকে হত্যা করা হবে। তিনি তখন স্বামীকে বাঁচাতে জনির লালসার শিকার হতে বাধ্য হন। পরে ওই তরুণীকে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কার্যালয়ে ফেরেন জনি। এরপর একটি সাদা কাগজে ওই দম্পতির স্বাক্ষর রেখে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

তরুণী জানান, তিনি থানায় মামলা করতে চাইলেও স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা বিচারের আশ্বাস দিয়ে তাদের থানায় যেতে দেননি। কিন্তু বিচার দূরের কথা, এখন তারা আছেন অব্যাহত হুমকির মুখে। উপায়ান্তর না পেয়ে শেষে তিনি গত শনিবার রাতে কাফরুল থানায় মামলা করেন।

ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, জনি ও আতিক সন্ত্রাসী প্রকৃতির, ক্ষমতাধরও। তারা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, মুরগি জনির বাবার নাম আসাদ আলী দেওয়ান। আতিকের বাবা ইউসুফ আলী দেওয়ান। দুজনই বাগানবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। মুরগি জনি ঢাকা উত্তরের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং আসন্ন সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাব্বির দেওয়ান জনির চাচাতো ভাই। আগে তারই রাজনীতি করতেন মুরগি জনি।

২০০২ সালে সাব্বিরের কার্যালয় থেকে ২টি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন মুরগি জনি। ওই মামলায় ৮ বছর জেলবন্দি থাকার পর বছর দুয়েক আগে ছাড়া পান। এর পর বিপুল নামে প্রভাবশালী এক নেতার মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবক লীগে নাম লেখান। সংগঠনটির যে কার্যালয়ে গার্মেন্টসকর্মীর স্বামীকে আটকে রাখা হয়েছিল, সেখানে এর আগেও বেশ কয়েকজনকে নির্যাতন করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার এসআই রবিউল আলম জানান, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে