শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় রাতেও বিক্ষোভে উত্তাল ঢাবি ক্যাম্পাস

ক্যাম্পাস প্রতিবেদক

রাতেও বিক্ষোভে উত্তাল ঢাবি ক্যাম্পাস

রাজধানীর কুর্মিটোলায় দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের দাবিতে সোমবার সকাল থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এরপর রাতেও ক্যাম্পাস গরম করে রেখেছেন আন্দোলনকারীদের।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল, রাজু ভাস্কর্যে প্রতিবাদী গান-কবিতায় সমাবেশ এবং মোমবাতি মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে অবস্থান নিতে দেখা যায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের।

সহপাঠী ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হতে না হতেই সকাল থেকে প্রতিবাদ এবং ধর্ষকের বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাবি ক্যাম্পাস। দুপুরে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ডাকসু ভিপিও মানববন্ধন করেন। ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন ভিপি নুরুল হক নুর। ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সবার একটাই দাবি, ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় যারাই জড়িত থাক তাদের চিহ্নিত ও দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।

শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করে প্রগতিশীল ছাত্র জোট। এ সময় তারা ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা মশাল মিছিল বের করে শামসুন্নাহার হলের সামনে দিয়ে মিছিল করে ভিসি চত্বরসহ ক্যাম্পাসজুড়ে মিছিল করে। মশাল মিছিলে ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়কে নেতৃত্বে দেখা যায়।

অন্যদিকে, রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদী গানে কবিতায় সমাবেশের আয়োজন করেন ‘পালাবদল’ নামে ২০১৩/১৪ সেশনের ঢাবি শিক্ষার্থীরা। সেখানে একে একে বিপ্লবী ও প্রতিবাদী গান, কবিতা আবৃত্তি করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’, ‘দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার’,’ এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার’, ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’, ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন’, ‘বিপ্লবেরই রক্ত রাঙা ঝাণ্ডা’, ‘আমায় একটা সাদা মানুষ দাও’, ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’, ‘বুক বেঁধে তুই দাঁড়া দেখি’ ও ‘আমি ভয় করব না ভয় করব না’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’ ও ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘ঐ উজ্জ্বল দিন ডাকে স্বপ্ন রঙিন’, ‘ভয় কি মরণে’ ও ‘আমাদের জপতব মন্ত্র’, ও ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ সহ অসংখ্য গান পরিবেশিত হয়।

অন্যদিকে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীর নেতৃত্বে মোমবাতি জ্বালিয়ে নিপীড়নবিরোধী পদযাত্রা ও আলোক প্রজ্বলন মিছিল ডাকসু চত্বর থেকে বেরিয়ে শহীদ মিনারে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, এজিএস সাদ্দাম হোসাইনের নেতৃত্বে ডাকসুর নেতাসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বলন করেন।

গোলাম রাব্বানী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সেরকম আইন বাংলাদেশেও করা দরকার।

সাদ্দাম হোসাইন বলেন, এ ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ডাকসুর নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ পিছু হটবে না। বিচারের দাবিতে আমরা আজ রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারকলিপি পেশ করব। আগামীকাল সকাল ১০টায় ছাত্রলীগ রাজু ভাস্কর্য থেকে প্রতিবাদী আল্পনা আঁকবে। বিকেল ৩টায় ছাত্র শিক্ষক প্রতিবাদী সমাবেশ হবে। সন্ধ্যা ৬টায় নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ প্রতিবাদ জানাবে। পরবর্তী সময়ে আরও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

উল্লেখ্য, রোববার কুর্মিটোলা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় বাস থেকে নামার পর ধর্ষণের শিকার হন ঢাবি শিক্ষার্থী। তিনি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক্ষণিকা’ নামের দোতলা বাসে (ঢাবি-টঙ্গী রুট) বাড়ি ফিরছিলেন। সন্ধ্যায় কুর্মিটোলায় বাস থেকে নেমে যাওয়ার পর তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে