ইরানি সাংস্কৃতিক স্থাপনায় ট্রাম্প হামলা চালালে তা হবে যুদ্ধাপরাধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইরানি সাংস্কৃতিক স্থাপনা
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ভাষায় ইরানের সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলার হুমকি দিয়েছেন, তাকে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে তুলনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

শনিবার (৫ জানুয়ারি) ইরানকে হুমকি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ইরান প্রতিশোধ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আঘাত হানলে পাল্টা জবাব দিতে তাদের ৫২টি লক্ষ্যবস্তু বাছাই করে রাখা হয়েছে। যার মধ্যে অনেক সাংস্কৃতিক স্থাপনাও আছে।

universel cardiac hospital

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই হুমকি দিয়েছিলেন ইরান তাদের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সুলাইমানিকে হত্যার কঠোর প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর।

রোববার (৬ জানুয়ারি) ফের এই হুমকির পুনরাবৃত্তি করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, যদি ওরা মার্কিন নাগরিকদের হত্যা করে, নির্যাতন করে, রাস্তার ধারে বোমা মেরে মার্কিনিদের উড়িয়ে দেয়, তাহলে আমরা কেন ওদের সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলা চালাতে পারবো না?

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একে সরাসরি যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে তুলনা করেছে। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, ট্রাম্প যদি এই কাজ করেন, সেটা হবে যুদ্ধাপরাধের শামিল।

যুদ্ধ সম্পর্কিত যে জেনেভা কনভেনশন, তার ৫৩ ধারার কথা উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, কোন ধরনের সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলা একেবারেই নিষিদ্ধ।

আর ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, ট্রাম্প আসলে যুদ্ধাপরাধ করার হুমকি দিচ্ছেন।

আর সবচেয়ে কঠোর জবাব এসেছে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের কাছ থেকে। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকিকে আইএস যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যের সাংস্কৃতিক স্থাপনা ধ্বংসের চেষ্টা করেছিল, তার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তিনি বলেছেন, হাজার বছর ধরে যে বর্বরতা এসে ইরানের নগরগুলো ধ্বংস করেছে, সভ্যতা ধ্বংস করেছে, পাঠাগার পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা এখন কোথায়? ইরানিরা এখনো দাঁড়িয়ে আছে আরও শক্তিশালী হয়ে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টপ্রার্থী জো বাইডেন বলেছেন, জেনারেল সোলেইমানি যত খারাপ লোকই হোক, মনে রাখতে হবে তিনি ইরান সরকারের একজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি, তাকে হত্যার ফলে ইরান এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুমকি দিচ্ছে।

আর সিনেটর চাক শুমার বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে, এমন আশু হুমকি তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটদের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা সীমিত করতে তিনি প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাব আনবেন। এর লক্ষ্য হবে ইরানের বিরুদ্ধে যেকোন সামরিক ব্যবস্থা যেন ৩০ দিনের বেশি দীর্ঘ না হয়।

আর জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেসকো বলছে, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সাংস্কৃতিক স্থানগুলো সুরক্ষার কনভেনশন মেনে চলতে হবে।

সংস্থাটির পরিচালক জেনারেল আউদরেই আজুলেই জোর দিয়ে বলেন, তেহরান ও ওয়াশিংটন ১৯৭২ সালের কনভেনশনে সই করেছে। এতে বলা হয়, অন্যান্য দেশের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কোনো দেশই সেই পদক্ষেপ নিতে পারবে না।

ইউনেসকোরে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ইরানের ২২টি সাংস্কৃতিক স্থান রয়েছে। তাদের মধ্যে নকশা জাহান নামে পরিচিত রাজকীয় ময়দান স্কয়ার রয়েছে। ইসফাহান শহরে ১৭ শতকে শাহ আব্বাস এটির নির্মাণ করেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে