বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের বিশেষ আসর বঙ্গবন্ধু বিপিএল যাচ্ছেতাই গেল সিলেট থান্ডারের। হারের বৃত্তেই বন্দি থাকতে হলো তাদের। গ্রুপপর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে জয়ের আশা করেছিল তারা। তবে ‘চায়ের দেশের’ দলটিকে হতাশ করল কুমিল্লা ওয়ারিওয়র্স। তাদের ৫ উইকেটে হারিয়ে প্লে-অফের আশা বাঁচিয়ে রাখল তারা।
এখন পর্যন্ত ১০ ম্যাচ খেলে ৫টি করে জয়-পরাজয়ের মুখ দেখেছে কুমিল্লা। হাতে আছে আর ২ ম্যাচ। বাকি ম্যাচগুলোতে জয় পেলেই প্লে-অফে খেলার টিকিট পাবে তারা। সেখানে ১২ ম্যাচ খেলে মাত্র ১ জয় ও ১১ হারের তিক্ত স্বাদ নিয়ে বিদায় নিল সিলেট।
১৪২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় কুমিল্লা। সূচনালগ্নেই নাঈম হাসানের এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ফারদিন হাসান। একই বোলারের বলে ক্লিন বোল্ড হয়ে দ্রুত প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন উপুল থারাঙ্গা। সেই তোড় সামলানোর আগেই নাঈমের তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরত আসেন নাহিদুল ইসলাম।
মাত্র ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে কুমিল্লা। এ পরিস্থিতিতে সৌম্য সরকারকে নিয়ে দলের হাল ধরেন ডেভিড মালান। প্রথম থেকেই ক্রিজে ছিলেন তিনি। বিপর্যয়ের মুখে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন দেন সৌম্য। দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে দুজনের মধ্যে। ক্রিজে সেট হয়ে যান তারা। উভয়ই স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটাতে থাকেন।
তাতে বিপদ কাটিয়ে ওঠে কুমিল্লা। দ্রুতগতিতে ঘুরে তাদের রানের চাকা। জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তারা। পথিমধ্যে ফিফটি তুলে নেন মালান। তবে এরপর বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি তিনি। এবাদত হোসেনের বলির পাঁঠা হন এ ওপেনার। এর আগে ৪৯ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৫৮ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন তিনি।
মালান ফিরলেও থেকে যান সৌম্য। পরে ডেভিড উইজকে নিয়ে জয়ের পথে এগিয়ে যান তিনি। তবে জয় থেকে সামান্য দূরে থাকতে জনসন চার্লসের বলে আউট হন উইজ। পরে ইয়াসির আলিকে নিয়ে বিজয় নিশ্চিত করেন সৌম্য। মারকাটারি ব্যাটিংয়ে ৩০ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৫৩ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন তিনি। মালান ও তার অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ৫ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর করে কুমিল্লা।
আজ মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে সিলেট। শুরুটা সতর্ক করেন দুই ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার ও আব্দুল মজিদ। তবে একটু আগ্রাসী হতেই আল-আমিন হোসেনের বলে ফেরেন ফ্লেচার (২২)।
পরে জনসন চার্লসকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন মজিদ। ভালো সঙ্গ পাচ্ছিলেন তিনি। তবে হঠাৎ পথচ্যুত হন চার্লস। আল-আমিনের বলে ব্যক্তিগত ২৬ রান করে ফেরেন তিনি। এরপর মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে খেলা ধরেন মজিদ। দারুণ খেলছিলেন তারা। যদিও রক্ষণাত্মক খোলস ছেড়ে বের হতে পারেননি এ জুটি। আচমকা আবার থমকে যান মিঠুন। মুজিব-উর রহমানের বলে বিদায় নেন তিনি।
শেষদিকে এসে ঝড় তোলার প্রচেষ্টা করেন জীবন মেন্ডিস। তবে দ্রুতগতিতে রান তোলার জন্য সেটা যথেষ্ট ছিল না। ১১ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ফেরেন তিনি। তাকে ফিনিশ করেন ডেভিড উইজ।
টপঅর্ডাররা একে একে বিদায় নিলেও একপ্রান্ত আগলে ছিলেন মজিদ। শেষদিকে হার মানেন তিনিও। ৪০ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৪৫ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস খেলে ফেরেন তিনি। তাকেও শিকার বানান উইজ। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৪১ রান তুলতে সক্ষম হয় সিলেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: ৫ উইকেটে জয়ী কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স।
সিলেট থান্ডার ইনিংস: ১৪১/৫ (২০ ওভার)
(ফ্লেচার ২২, আব্দুল মজিদ ৪৫, চার্লস ২৬, মিথুন ১৮, জীবন মেন্ডিস ২৩, মিলন ২*, সোহাগ গাজী ২*; সানজামুল ০/৩০, আবু হায়দার ০/১৮, মুজিব উর রহমান ১/২৩, আল-আমিন হোসেন ২/৩০, সৌম্য ০/৭, ওয়াইজ ২/৩১)।
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ইনিংস: ১৪২/৫ (১৯.১ ওভার)
(থারাঙ্গা ৪, ফারদিন ১, মালান ৫৮, অঙ্কন ১১, সৌম্য ৫৩*, ওয়াইজ ১৩, ইয়াসির ০*; ইবাদত হোসেন ১/২৬, নাঈম হাসান ৩/২১, সোহাগ গাজী ০/১৬, দেলোয়ার হোসেন ০/৩৫, চার্লস ১/৩০, নাজমুল ইসলাম ০/৯)।
ম্যাচ সেরা: ডেভিড মালান (কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স)।