ঢাবিতে ছাত্রী নিরাপত্তায় ৮ দফা দাবি

ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাবিতে ছাত্রী নিরাপত্তায় ৮ দফা দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য ৮ দফা দাবি জানানো হয়েছে এক নারী সমাবেশে। এসব দাবি না মানা পর্যন্ত তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি চলতে থাকবে।

বুধবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য চত্বরে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে আয়োজিত নারী সমাবেশে দাবিগুলো তুলে ধরেন কবি সুফিয়া কামাল হল সংসদের সহ-সভাপতি তানজীনা সুমা।

universel cardiac hospital

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন।

 সমাবেশ তুলে ধরা ৮ দাবির মধ্যে রয়েছে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের দ্রুত বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল গঠন, দেশের সব আদালতে নারী নিপীড়ন সেল গঠন করে ধর্ষণের মামলার বিচার সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে করা, টিএসসি থেকে সুফিয়া কামাল হল, গণতন্ত্র তোরণ থেকে সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট পর্যন্ত ল্যাম্পপোস্ট ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের নিজস্ব ইস্যু নিয়ে কনসাল্ট করার জন্য ৪/৫ জন মহিলা শিক্ষক দিয়ে নারী উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের যেকোনো আইনি সহয়তার খরচ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করা, ক্যাম্পাস থেকে ভবঘুরে, নেশাখোর ও পাগলদের অপসারণ করা, ক্যাম্পাসের বাসের স্টপেজগুলোর নিরাপত্তা পুনর্বিবেচনা করা ও ছাত্রীদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়া, এবং জরুরি প্রয়োজনে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে অবস্থান করতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা ।

এসব দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, ধর্ষকে ক্রসফায়ার নয়, দ্রুত বিচার দেখতে চান তারা।

তিনি বলেন, দেশে আরও অসংখ্য যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে সেগুলোর প্রত্যেকটির বিচার আমি দেখতে চাই। যাতে করে আমাদের দেশে এই ঘটনা বন্ধ হয়। আর এ শাস্তি কোনোভাবেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আমরা চাই না। যথাযথ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই শাস্তি কার্যকর করতে হবে। একমাত্র তাহলেই এ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে।

সামিনা লুৎফা বলেন, আমরা এমন সমাজ দেখতে চাই যেখানে কেউ ধর্ষিত হওয়ার পর লুকিয়ে থাকবে না, সে মনে করবে না যে তার জীবন শেষ হয়ে গেছে, সম্ভ্রম তার চলে গেছে। আর দশটা ক্রাইমের মতোই যখন আমাদের নারীরা পরিষ্কারভাবে ভাবতে পারবে যে আমি ধর্ষককে বিচারের আওতায় আনব। এই  হচ্ছে বাংলাদেশের মুখ। এমন নাগরিকই আমরা চাই। একবিংশ শতাব্দীতে এসে অন্তত এতটুকু ত হয়েছে আমাদের শিক্ষার্থী নিজে বিচার চাইছে, নিজে বাঁচতে চাইছে নিজে শাস্তি চাইছে।

সংহতি জানিয়ে অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, আজকে আমরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে দাঁড়াতে পারছি। এতটুকু পরিবর্তন হয়েছে যে আজকে আমাদের ছাত্রী সাহসের সাথে যেই মুহূর্তে সে ছাড়া পেয়েছে সেই মুহূর্তে এসে সে বলছে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, সে এর বিচার চায়। উনিশশো একাত্তর সাল আমরা ভুলে যাইনি। আমাদের স্বাধীনতা তৈরি হয়েছে দুই লক্ষ মা-বোনের ধর্ষণের অভিজ্ঞতার উপর দিয়ে। সেদেশে কিভাবে একজন নারী ধর্ষিত হওয়ার পরও একটা রাষ্ট্র নিরব থাকতে পারে আমি সেই প্রশ্ন করতে চাই।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল সংসদের সাহিত্য সম্পাদক খাদিজা শারমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে তিথি দত্ত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এই বাংলাদেশে প্রতিটি সন্ধ্যায় হাজার হাজার অপ্রকাশিত যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। এই নীলক্ষেত, শাহবাগ, নিউ মার্কেট চত্বরে হাজার হাজার অপ্রকাশিত যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে থাকে। আপনারা নারীদের স্বাধীনতা দিন। এই স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই।

সমাবেশে প্রতিবাদী কবিতা আবৃত্তি করেন রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী সানজিদা আফরিন।

এ সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের হাতে ‘চুপ করে শুধু তাকিয়ে থেকে বিবেকহীন পশুর পরিচয় দিচ্ছেন কি?’, ‘কেউ দর্শক, কেউ ধর্ষক,কেউ মানুষ না?’, ‘আমি কি নিরাপদ?’, ‘কাল সে আজ আমি পরশু কে?’ লেখা সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে