ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় আটক ১

মত ও পথ রিপোর্ট

ঢাবি ছাত্রীকে গণধর্ষণ

কুর্মিটেোলায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় সন্দেভাজন একজনকে আটক করেছে ব্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। তবে ওই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি র‌্যাব সদস্যরা।

মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব সদর দফতরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এক সংবাদমাধ্যম‌‌কে বলেন, ‘ কুর্মিটোলায় ঢাবিছাত্রী ধর্ষণ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরবর্তীতে জানানো হবে।’

আটককৃত ব্যক্তির এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা এ র‍্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে এক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব আটক করে সদর দফরে নিয়ে আসে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে র‌্যাব আজ সকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।’

এর আগে মঙ্গলবার রাতে সিসিটিভি ফুটেজ ও ভুক্তোভোগী ছাত্রীর বিবরণের সহায়তা নিয়ে এই ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

একটি সূত্র জানিয়েছিল, ওই ব্যক্তিকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে এবং শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে গ্রেফতার করা হবে। যে কারণে এখনই গণমাধ্যমে তার নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছিলেন ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার প্রধান মাসুদুর রহমান। তবে চিহ্নিত ব্যক্তি সিএনজি চালক বলে জানিয়েছে র‌্যাবের একটি সূত্র।

সূত্রটি জানায়, আইন-শৃঙ্খলার কয়েকটি বাহিনী একজনকে চিহ্নিত করে তার পরিচয় ও অবস্থান নির্ণয় করেছে। ওই ব্যক্তির প্রতিটি পদক্ষেপ এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নখদর্পণে। প্রমাণ মিললেই তাকে যে কোনো সময় গ্রেফতার করা হবে।

তবে কীভাবে ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ওই ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে ধারণা করা হচ্ছে যে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

এর আগে মঙ্গলবার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীকে শনাক্ত করা হবে বলে জানিয়েছিলেন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কুর্মিটোলায় সড়কের পাশে ঘটনাস্থলের কাছের দুটি সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করা হবে।

এছাড়াও ভুক্তোভোগী ছাত্রীর বিবরণী ও তার মুখে শুনে স্কেচ এঁকে ধর্ষণকারীকে চিহ্নিত করা হচ্ছে বলেও জানা যায়।

মঙ্গলবার ডিবির উত্তরের উর্ধতন কর্মকর্তা ও ডিএমপির গুলশান বিভাগের ডিসি পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারেও (ওসিসি) ছাত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছেন।

মামলার তদন্তকারী এক কর্মকর্তা জানান, ধর্ষণের শিকার ঢাবি ছাত্রীর মুখে বিবরণ শুনে অপরাধী শনাক্তের কাজ করছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে ছাত্রীর বর্ণনা মিলিয়ে দেখার চেষ্টা চলছে।

এছাড়া মঙ্গলবার পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে গিয়েছে ম্যাপ এঁকেছেন। তরুণী কোন দিক থেকে এসেছেন, তার সামনে পেছনে কারা ছিল, সম্ভাব্য কোন স্থান থেকে মুখ চেপে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে সেসব বিষয়ে ধারণা নিয়েছেন।

তবে গতকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইন-শৃংখলা বাহিনী। ক্যান্টনমেন্ট থানায় দায়েরকৃত মামলাটি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ক্লাস শেষে ক্যাম্পাস থেকে বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে রোববার রাতে রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন।

গভীর রাতে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তিনি বর্তমানে হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন।

এরপর সোমবার সকালে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে যাওয়ার পথে একটি ঝোপের মধ্য থেকে ভিকটিমের বই, ঘড়ি, ইনহেলার ও চাবির রিংসহ বেশ কিছু আলামত পাওয়া যায়।

ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. ডা. সোহেল মাহমুদ।

এদিকে ধর্ষণের বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ঘটনার দিন রাতেই ধর্ষকদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বিক্ষোভ করেছে।

জানা গেছে, রাজধানীর কুর্মিটোলায় বান্ধবীর বাসায় যেতে বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ওঠেন ওই ছাত্রী। বাস থেকে কুর্মিটোলা এলাকায় নামার পর অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন তার মুখ চেপে ধরে। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন।

এরপর তাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করা হয়। রাত ১০টার দিকে চেতনা ফেরার পর তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বান্ধবীর বাসায় যান। বান্ধবীকে ঘটনা জানান। এরপর সহপাঠীরা তাকে আবাসিক হলে নিয়ে আসেন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই ছাত্রী বলেছেন, রোববার সন্ধ্যায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে চড়ে বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন। উদ্দেশ্য একসঙ্গে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবেন।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি কুর্মিটোলা এলাকায় বাস থেকে নামেন। সেখান থেকে অজ্ঞাত কয়েক ব্যক্তি তার মুখ চেপে ধরে পাশের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। এরপর তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

নির্যাতনের একপর্যায়ে জ্ঞান ফিরে পান ওই ছাত্রী। পরে পাশবিক নির্যাতনে আবারও জ্ঞান হারান। রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফেরে ওই ছাত্রীর। তিনি তার বান্ধবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্যাম্পাসে যান। পরে তার বন্ধুরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে