‘দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও শক্তিশালী করা হয়েছে।’-বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি। সংবিধান অনুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দিয়ে থাকেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। বাংলাদেশের জনগণের বিপুল সমর্থনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় কার্যকর করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলা এবং বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। আদালত দোষীদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে। এছাড়া, হলি আর্টিসান হামলা মামলা, নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায় দ্রুত প্রদান করা হয়েছে। দুর্নীতি, জুয়া, মাদক, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে এবং জনজীবনে স্বস্তি বিরাজ করছে।’
এ সময় সরকারের সব সেক্টরের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যা আগামী ২০২৩ সালে চালু হবে। ২৮ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের অধীনে নির্মিতব্য তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েকে ৯ হাজার ফুটে সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ফুটে সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বাংলাদেশকে এভিয়েশন সেক্টরে রিজিওনাল হাব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা-সমীক্ষা ও সাইট সিলেকশনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। নতুন প্রজন্মের ১২টি সুপরিসর আধুনিক উড়োজাহাজ বাংলাদেশ বিমানের বহরে সংযোজন করা হয়েছে। সর্বশেষ সংযোজিত সর্বাধুনিক বোয়িং ৭৮৭ ড্যাশ ৯ ড্রিমলাইনার দুটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হাঁটছি, সে পথেই বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে যেতে হবে। এ বছর আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। আমাদের দৃষ্টি ২০২১ সাল ছাড়িয়ে আরও সামনের দিকে। ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে। এটাই জাতির প্রত্যাশা। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী- সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ন এবং সমাজের সকল স্তরে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহ অর্জনসহ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হব।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শত প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি ও বৈরিতার মধ্যেও দেশে সুশাসন সুসংহতকরণ এবং গণতন্ত্র চর্চা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। ইতিহাসের সাহসী সন্তানেরা লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। আমাদের দায়িত্ব এ দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। একাত্তরের শহীদদের কাছে আমাদের অপরিশোধ্য ঋণ রয়েছে। আসুন, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।’