তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা শুরু

গাজীপুর প্রতিনিধি

ইজতেমা
ফাইল ছবি

দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের উপস্থিতিতে ইবাদত-বন্দেগি, জিকির- আসকার আর আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে মুখর কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। আজ শুক্রবার বাদ ফজর বয়ানের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়।

তুরাগ তীরে সোনাভান বিবির টঙ্গী শিল্প শহরের ইজতেমা মাঠে লাখ লাখ মুসল্লির উপস্থিতিতে চলছে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে বয়ান। আজ দেশের সর্ববৃহৎ জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমা ময়দানে।

বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদের বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আজ প্রথম দিন। কনকনে শীত উপেক্ষা করে লাখো মুসল্লি বয়ান, তাশকিল, তাসবিহ-তাহলিলে সময় কাটাচ্ছেন। তবে শীতের কারণে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মুসল্লিদের প্যান্ডেলের বাইরে যেতে দেখা যায়নি।

এবারের ইজতেমা বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। বিশ্ব মুসলিমের অন্যতম বৃহৎ এ ধর্মীয় জমায়েত দেশ বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। বিশ্ব ইজতেমায় এবারও পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রোববার (১২ জানুয়ারি) দুপুরের আগেই আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। ১৭ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব।

ইজতেমায় অংশ নিতে ৮ জানুয়ারি (বুধবার) থেকেই মুসল্লিরা তুরাগ তীরে আসতে শুরু করেন। বৃহস্পপতিবার দুপুরের আগেই পুরো ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অনেক মুসল্লি ময়দানে স্থান না পেয়ে রাস্তার পাশে ফুটপাত এবং বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করছেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম পর্বে স্মরণকালের সবচে বেশি মুসল্লি জমায়েত হয়েছেন বলে ইজতেমা আয়োজক সূত্রে জানা গেছে।

শুক্রবার সকাল থেকে মুসল্লিদের ঢল আরও বাড়তে থাকে। ইজতেমায় অংশ নিতে ট্রেন, নৌকা, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে হাজারো মুসল্লি ইজতেমা মাঠে সমবেত হচ্ছেন। তারা জামাতবদ্ধ হয়ে দলে দলে ইজতেমা মাঠের নির্ধারিত স্থানে (খিত্তায়) প্রয়োজনীয় মালামাল ও ব্যাগ নিয়ে অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতিমূলক বয়ান দেয়া হয়। এতে ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের তিন দিন অবস্থানের নিয়মকানুনের বয়ান করা হয়।

শুক্রবার দেশের সর্ববৃহৎ জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমা ময়দানে। এতে ১০ লাখের ও বেশি মুসল্লি এক জামাতে শরিক হয়ে জুমার নামাজ আদায় করবেন। রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি এ বৃহৎ জুমার নামাজে শরিক হবেন। ইতোমধ্যে অনেকে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় আত্মীয় স্বজনের বাসায় অবস্থান নিচ্ছেন।

দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লি দূর-দূরান্ত থেকে চলে আসায় ইতোমধ্যে টঙ্গী স্টেশন রোড ও কামারপাড়াসহ বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের আশপাশের এলাকায় মুসল্লিদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। তিল ধারণের ঠাঁই নেই কোথাও। এত বিপুল সংখক মুসল্লির নিরাপত্তায় হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

ইজতেমা মাঠের মুরব্বিরা জানান, তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। মাঠের সব কাজ করা হচ্ছে পরামর্শের মাধ্যমে। এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের অনুসারী মুসলমানরা অংশ নেন। তারা এখানে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতি কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকান্ড সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করে থাকে জেলা প্রশাসন। বিদেশি মেহমানগণের আবাসস্থল নির্মাণের নিমিত্তে টিন সরবরাহ, বিভিন্ন দফতরের কন্ট্রোল রুমের স্থান নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বিভাগীয় প্রশাসনের দিক নির্দেশনায় বিভিন্ন কার্যাদি তদারকি করে থাকে। সর্বোপরি বিশ্ব ইজতেমার সকল দিক জেলা প্রশাসন পর্যবেক্ষণ করে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে