রাজধানীর ধানমন্ডির একটি ফ্ল্যাটে জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে র্যাব। অভিযানে রুমের বিভিন্ন আসবাবপত্র থেকে বের করে আনা হয় কোটি কোটি টাকার জাল নোট।
খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা ওই বাড়িতে ভিড় করেন। তারাও দেখতে পান- ঘরের ওয়াল আলমারি, শো-কেস, বিছানার নিচে ছিল হাজার টাকার বান্ডিল। এমনকি বাথরুমের ফলস ছাদের মধ্যে ব্যাগে রাখা ছিল টাকার ব্যাগ। যেখানে সব থেকে বেশি টাকা পাওয়া যায়। একে একে প্রতিটি ঘর তল্লাশি করে র্যাব সদস্যরা বের করে আনেন জাল টাকা এবং তা তৈরির সরঞ্জাম। এ সময় ঘরজুড়ে শুধু নতুন টাকার ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছিল।
অভিযানে ফ্ল্যাটের একটি রুমে পাওয়া যায় ভল্ট। সেটা ভেঙে বের করা হয় জাল নোটের বান্ডিল। আবার অনেক টাকা ছাপানো হয়েছে, কিন্তু সেগুলো পিস করে কাটা হয়নি। অনেক টাকার কাগজের গায়ে ছবি এবং জলছাপ বসানো হয়েছে কিন্তু সেটা ছাপা হয়নি। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার অভিযানে এত জাল টাকা উদ্ধার হয় যা গুণতে গিয়ে রীতিমতো কাহিল হয়ে পড়েন র্যাব সদস্যরা। এসব টাকার বান্ডিল পরে একটি খাটে এবং টেবিলে সাজানো হয়। যা দেখে যে কারো মনে হবে এটা টাকার খাট!
অভিযান চলাকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন র্যাব-১০ এর উপ-অধিনায়ক মেজর শাহরিয়ার। তিনি বলেন, বাড়ির যেখানেই হাত দেওয়া হয়েছে সেখানে শুধু জাল টাকার বান্ডিল পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই ফ্ল্যাটে টাকা তৈরির মতো অপরাধ হচ্ছিল। আমরা শাহ আলম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করলে সাইফুলের নাম পাই। শুক্রবার ভোর থেকে অভিযান শুরু করলে এসব নকল টাকা উদ্ধার হয়।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি কাইমুজ্জামান খান ব্রিফ করে সাংবাদিকদের বলেন, ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকার একটা প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। বেশ কিছুদিন রাজধানীতে জাল টাকার চক্র কাজ করছে। র্যাবের গোয়েন্দা দল চক্রটি ধরতে নজরদারি শুরু করে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কদমতলী থেকে শাহ আলম নামের একজনকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় এক লাখ ৯০ হাজার টাকা। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাইফুলের পশ্চিম ধানমন্ডির বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, বাসায় তল্লাশি করে কয়েক কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। এ সময় টাকা তৈরির সরঞ্জাম হিসেবে কাগজ, প্রিন্টার, টোনার, কেমিকেল, ডায়াসসহ টাকা তৈরিতে যা লাগে সব পাওয়া যায়।
সাইফুলের স্ত্রী ও সন্তান গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। তাই তাদের বিষয়ে বিস্তারিত পাওয়া যায়নি বলে জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক।
মাসে কী পরিমাণ জাল টাকা বাজারে ছাড়তো জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখনো তাকে সেই পরিমাণ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারিনি। তবে তারা যে এই ধরনের কাজ দীর্ঘদিন ধরে করছে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অতিরিক্ত ডিআইজি কাইমুজ্জামান খান বলেন, এই চক্রের আরও সক্রিয় সদস্য র্যাবের নজরদারিতে রয়েছে। যেকোনো সময় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। যে টাকা পাওয়া গেছে সেটা অবশ্যই এক দুই কোটি টাকার উপরে। গণণা না করে বলা যাচ্ছে না।
সাইফুল ও শাহ আলম আগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কি-না জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখনো নিশ্চিত না তারা এর আগে আটক হয়েছিলেন কি না। তবে আমাদের যে অপরাধীর ডাটা বেজ আছে সেটা পর্যালোচনা করে বলা সম্ভব হবে।
সাইফুল যে মহল্লায় থাকেন ওই মহল্লার দোকানি আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, লোকটা ভদ্রই জানতাম। আসত যাইত গালভরা হাসি দিত। কখনও আমাদের কাছে জাল টাকার নোট দিতে দেখিনি। টেরও পাইনি। কিন্তু জাল টাকা বানান, কারবার করেন কখনও বুঝতেই পারিনি!
ভবনটির তৃতীয় তলার যে ফ্ল্যাটে সাইফুল ভাড়া থাকতেন তার পাশের ফ্লাটে থাকেন বাড়ির মালিক। অভিযানের পর তিনি তাজ্জব বনে যান। তিনি বলেন, পাশের ফ্ল্যাটে এমন কাণ্ড; কিন্তু এতদিন ধরে টেরই পেলাম না।
সাইফুলের বাসার নিচের বাসিন্দা রোজিনা বেগম বলেন, কয়েক বছর ধরেই তো তাকে চিনি। আমাদের যে হোটেল আছে সেখানে প্রায়ই তিনি নাস্তা করতেন। কোনোদিন তো জাল টাকা তার কাছ থেকে পাইনি। সবসময় হাসি মুখে আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন। বিভিন্ন গল্প করতেন।