বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মন্তব্য করেছেন, রাতের ভোট ডাকাতির কেলেঙ্কারিতে অস্বস্তিতে পড়ে এখন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ডিজিটাল ভোট ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
আজ রোববার নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নীরবে, নিঃশব্দে জনগণের ভোটাধিকার হরণের অপর নাম ইভিএম। সারা বিশ্বে বাতিল হওয়া ভোটাধিকার হরণের যন্ত্র ইভিএমে ভোট করার পথ থেকে সরে আসতে ইসিকে আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে দলটির ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফু, তাঁতী দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইভিএমের নানা ত্রুটি তুলে ধরে রিজভী বলেন, বিশেষজ্ঞরা নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, এ মেশিনে ডিজিটাল ভোট ডাকাতি করা যায় খুবই সহজে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ইভিএম মেশিনগুলো সম্পূর্ণ অরক্ষিত। কেউ ইচ্ছা করলেই অন্যের ভোট সহজেই দিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন যে ইভিএমটি ব্যবহার করতে যাচ্ছে তার ইউনিট আছে দুটি। একটি কন্ট্রোল ইউনিট, অন্যটি ব্যালট ইউনিট। কন্ট্রোল ইউনিটে ফিঙ্গার প্রিন্ট থাকলেও ব্যালট ইউনিটে ফিঙ্গার প্রিন্টের ব্যবস্থা নেই। ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিটে ফিঙ্গার প্রিন্ট ম্যাচিংয়ের পর ব্যালট ইউনিটে গিয়ে একজনের ভোট দিতে পারবেন অন্যজন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বারবার বলছে, গোপন কক্ষে থাকবে ব্যালট ইউনিট। সেখানে ভোটার ছাড়া কারোর যাওয়ার সুযোগ নেই। এটা সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা তথ্য। এখন অধিকাংশ ভোট কক্ষের নিয়ন্ত্রণ থাকে ক্ষমতাসীন দলের হাতে। প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারদের সবাই সরকারি কর্মকতা। সুতরাং সরকারের হুকুমেই তাদের কাজ করতে হয়। তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকে সরকারি দলের প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট নামের ক্যাডার বাহিনী। তারাই পেটোয়া বাহিনীর সহযোগিতায় বের করে দেয় বিএনপি বা প্রতিপক্ষ দলের এজেন্টদের।
রিজভী বলেন, ভোটকক্ষে ভোটারের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়ার পর গোপন কক্ষের ব্যালট ইউনিটের কনফার্ম বাটনটি চাপেন হয় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নয়তো সরকারি দলের পোলিং এজেন্ট। ফলে ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণ যন্ত্রের মাধ্যমে ভোটদানের স্থায়ী সুযোগ হারাচ্ছেন। তা ছাড়া আবার কোনো ভোটারের ফিঙ্গার ম্যাচিং না হলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের হাতে ৫ শতাংশ ফিঙ্গার ম্যাচিং ক্ষমতা দিয়ে দিচ্ছে এই সরকারের একান্ত অনুগত নির্বাচন কমিশন। ফলে সাজানো ভোটের ফলাফলের মাধ্যমে জনগণকে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে।
ব্যালটের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচনের আয়োজন করায় নির্বাচনী ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ইভিএম এখন ইসির কাছে মধু। অর্থ লুটপাটের বিনিময়ে তারা সরকারকে ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি উপহার দেবেন। এ কারণে সব মতামতকে থোড়াই কেয়ার করে এই নূরুল হুদা কমিশন ইভিএমে ভোট করতে চান।
খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে রিজভী বলেন, ব্যক্তিহিংসার শিকার হয়ে গুরুতর রোগে-শোকে-ব্যথা-বেদনায় মুমূর্ষু অবস্থায় বন্দি হয়ে আছেন। সরকারের মদদে তার গুরুতর অসুস্থতা গোপন করা হচ্ছে। তার সুচিকিৎসারও সুযোগ দেয়া হয়নি। বিনা চিকিৎসায় দেশনেত্রী অনেকটাই চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়েছেন। দেশনেত্রীর ওপর নিপীড়নের মাত্রা নাৎসি দুঃশাসনের অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিরোধীদের অন্তত নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকারও এখন কোনো সুযোগ নেই।