ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনগামী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বিক্ষোভে অংশ নেয়াসহ নানান বিতর্কের পর অবশেষে নিজ দেশে ফিরে গেছেন ইরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রব ম্যাকায়ার।
ইরানের সংবাদমাধ্যম তেহরান টাইমস জানায়, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত প্রটোকল মেনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে তেহরান ছেড়েছেন। তবে কখন তেহরান ছেড়ে চলে গিয়েছেন বা কোন দেশে গিয়েছেন তা জানা যায়নি।
সম্প্রতি ইরানের সর্বোচ্চ সামরিক জেনারেল কাসেম সোলেইমানি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এক ড্রোন হামলায় হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি সোলেইমানি নিহতের ঘটনায় ‘চরম প্রতিশোধ’ গ্রহণের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন।
গত ৮ জানুয়ারি ইরাকের বাগদাদে অবস্থিত মার্কিন সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। কিন্তু হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পূর্বে ইউক্রেনগামী একটি বিমান ইরানে বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় ১৭৬ জন মানুষ মারা যায়।
প্রাথমিকভাবে ইরান দাবি করেছিল, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
তবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজস্ব গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে জানান, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। কানাডার অভিযোগকে প্রাথমিকভাবে উড়িয়ে দিলেও বিধ্বস্তের তিন দিন পরে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে স্বীকার করে ইরান। তারা এ ঘটনাকে ‘মনুষ্য ভুল’ বলে অভিহিত করে।
ইরানের স্বীকারোক্তির পরে ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন শত শত ইরানি। দেশটির আমির কবির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ছাত্রদের এক বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন ওই ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত।
১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের ওই পদক্ষেপকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘বেআইনি, অপেশাদার, সন্দেহজনক’ বলে বিবৃতিতে জানায়।
পরে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী তাকে আটক করে। কিন্তু আটকের তিন ঘন্টা পরে তাকে কূটনৈতিক স্বাধীনতার নিয়মে মুক্তি দেওয়া হয়। রোববার তাকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিক্ষোভে অংশগ্রহণের কারণ সম্পর্কে জানার জন্যে আদেশ জারি করা হয়।
এরমধ্যে ইরানের আইনের প্রতি সম্মান দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ করে তেহরানে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রব ম্যাকিয়ারের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন ইরানি বিক্ষোভকারীরা।
মঙ্গলবার তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই কূটনীতিকের অবয়বে একটি কার্ডবোর্ড কেটে সেটি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সঙ্গে বৃটিশ পতাকাও জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের এই পদক্ষেপ ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সুস্পষ্ট হস্তক্ষেপ এবং কূটনৈতিক রীতিনীতির পরিপন্থি। তার এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের ব্যর্থ নীতির প্রতি ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতার অনুমান শক্তিশালী করে।
এছাড়া রব ম্যাকেয়ারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাকে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছিলেন ইরানি বিচার বিভাগের মুখপাত্র গোলাম হোসেইন ইসমাইলি।