সগিরা হত্যা : চারজনের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে পিবিআইয়ের চার্জশিট

নিজস্ব প্রতিবেদক

সগিরা মোর্শেদ

রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় চাঞ্চল্যকর সগিরা মোর্শেদ হত্যার ৩০ বছর পর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত চার আসামির প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে সংস্থাটি।

দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার ২৫ জন তদন্ত কর্মকর্তার হাত বদলের পর ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে প্রমাণ পেয়েছে পিবিআই। আজ বৃহস্পতিবার ১ হাজার ৩০৯ পৃষ্ঠার চার্জশিট আদালতে দাখিল করে পিবিআই।

মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. রফিক এ চার্জশিট জমা দেন।

এর আগে দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ঘটনার ৩০ বছর পর আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। তদন্তভার নিয়ে তিন ধাপে মোট ছয় মাস পর চারজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হলো।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর পর এটিকে একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। হত্যাকাণ্ডে চারজনের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় চার্জশিটে প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন- নিহত সগিরা মোর্শেদের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন, হাসান আলীর শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান এবং ভাড়াটে খুনি মারুফ রেজা।

১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয় সগিরা মোর্শেদকে। পিবিআই দীর্ঘদিনের মামলাটি দায়িত্ব নিয়ে দ্রুত সময়ে অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে বলে জানান বনজ কুমার।

তিনি বলেন, মামলটি যখন পিবিআইয়ের কাছে আসে তখন আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারি নিহত সগিরা মোর্শেদের পরিবারের সঙ্গে আসামি শাহীনের বিভেদ রয়েছে। পারিবারিক বিরোধের জেরে শাহীন তার তিন তলার বাসা থেকে সগিরা মোর্শেদের রান্নাঘর ও বারান্দায় ময়লা ফেলত। এছাড়া শাশুড়ি সগিরাকে অনেক পছন্দ করত এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সগিরা-শাহীনের মধ্যেও দ্বন্দ্ব ছিল।

বনজ কুমার মজুমদার জানান, সগিরার কাজের মেয়ে জাহানুরকে মারধর করে ডা. হাসান আলী চৌধুরী। এ নিয়ে পারিবারিক বৈঠকে শাহীন সগিরাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। আসামিদের নিয়ে রাজারবাগ বাসার তৃতীয় তলায় সগিরাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ডা. হাসান আলী তার চেম্বারে আসামি মারুফ রেজার সঙ্গে ২৫ হাজার টাকায় হত্যার চুক্তি করে। ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মারুফ রেজা ও আনাস মাহমুদ প্রকাশ্য দিবালোকে সগিরা মোর্শেদকে গুলি করে হত্যা করে।

এ ঘটনায় ২৫ জন কর্মকর্তা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান। মামলা চলাকালে ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হলেও রহস্য উদঘাটন করতে পারেননি কেউ। তাদের মধ্যে একজনকে অভিযুক্ত করে একবার চার্জশিট হয়েছিল। পিবিআই’র চার্জশিটে আগের অভিযুক্ত সবাইকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে