ঢাকা সিটি নির্বাচনে বিএনপির পাশে নেই মিত্র জামায়াত!

মত ও পথ প্রতিবেদক

জামায়াতে ইসলামী
ফাইল ছবি

ঢাকা সিটি নির্বাচনে প্রচারণা জমে উঠেছে। উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটিতেই বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা মাঠ দাপিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রচারণা শুরুর পর গত সাতদিন ধরেই সকাল থেকে রাত অবধি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আর ভোট চাইছেন।

দলের দুই প্রার্থীর সঙ্গে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের প্রভাবশালী নেতারাও প্রচারণায় রয়েছেন। কিন্তু বিএনপি প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে তাদের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেয়া বিএনপির পুরোনো মিত্র ২০ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াতের নেতাদের প্রচারণায় দেখা মিলছে না।

ঢাকা উত্তরে মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে ২০ দলের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে দেখা গেছে। এর বাইরে বিএনপির আর কোনো শরিক দলের নেতৃবৃন্দকে মাঠে দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বিশেষ করে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিকে সমর্থনও জানায়নি এখনো। যদিও বিএনপি ওই নির্বাচনে তাদের সমর্থন চেয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ডিসেম্বর ২০ দলীয় জোটের বৈঠকের আগে সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান ফোন করে জামায়াত নেতাদের কাছে সমর্থন চান এবং বৈঠকে যোগ দিতে অনুরোধ করেন। জামায়াতের সংশ্লিষ্ট নেতারা তখন ঢাকার বাইরে সফরে থাকায় ওই বৈঠকে যোগ দেননি।

ওই বৈঠকের পর জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থীদের ২০ দলীয় জোট পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। তবে জামায়াতের একাধিক নেতা জানান, নির্বাচনে বিএনপিকে তারা সমর্থন দেননি। আবার এ নিয়ে মুখ খুলতেও রাজি নন তারা।

নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের  সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার মত ও পথকে বলেন, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। যা বলার আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বলব।

বিএনপিকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারেও বিএনপি ভালো বলতে পারবে।

তবে জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, বিএনপি সমর্থন চাইলেও জামায়াতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি। তিনি জানান, জামায়াত এবার সিটি নির্বাচনের কোনো পর্যায়ে অংশ নেয়নি। এমনকি স্বতন্ত্র হিসেবেও তারা কোনো ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদেও প্রার্থী দেয়নি।

২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, জামায়াতের যেসব নেতা ২০ দলের বৈঠকে থাকেন, সে দিন (২৮ ডিসেম্বর) তারা ঢাকায় না থাকায় বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি। তবে নির্বাচনের সমর্থন চাওয়ার বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সার্বিকভাবে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বিএনপির প্রার্থীদের সমর্থন জানানো হয়েছে। আর জামায়াত সমর্থন না করলে তারা প্রতিবাদ জানাত।

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপির নেতারাও নিশ্চিত করেছেন যে জামায়াতের কোনো প্রার্থী তাদের চোখে পড়েনি। আবার নির্বাচনী প্রচারেও বিএনপির পাশে নেই।

ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির দুই নেতা হাবীব উন নবী খান সোহেল এবং কাজী আবুল বাশার জানান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে জামায়াত কোনো প্রার্থী দিয়েছে বলে তারা শুনেননি। প্রচারেও এ পর্যন্ত তাদের পাননি তারা।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের এক সভায় আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে।

এর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী না থাকলেও ২৬টি কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিয়েছিল জামায়াত। যদিও ওই প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে দলটির এক ধরনের টানাপড়েন ছিল। ঢাকায় শেষ পর্যন্ত জামায়াতের তিনজন প্রার্থী জয়লাভ করেছিল।

অন্যদিকে, চট্টগ্রামে সমঝোতার মধ্য দিয়ে ৫৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে সাধারণ ও সংরক্ষিত মিলিয়ে ১০টি ওয়ার্ডে জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, যার দুটিতে তারা জয়লাভ করে। ২৮ এপ্রিলের ওই নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও মিত্র জামায়াত তখন কিছুটা কৌশলী ভূমিকা নেয় বলে তখন ২০ দলের মধ্যে আলোচনা ছিল।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে