চীনে রহস্যজনক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শত শত মানুষ। এরই মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই জন নিহত হয়েছেন। এর আগেও এমন রহস্যজনক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কয়েকশ লোক নিহত হয়েছিলেন।
জানা গেছে, পাঁচ দিনের মধ্যে ফুসফুসে যক্ষ্মার সংক্রমণের পর একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে যাচ্ছে। সবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন তারা।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বুধবার মধ্য চীনের উহানে ৬৯ বছর বয়সি এক ব্যক্তি মারা গিয়েছেন। এই অঞ্চলটিকেই ‘সার্স’ (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরাটরি সিন্ড্রোম) এর জীবাণু সংক্রমণের ‘এপিসেন্টার’ বা উৎসস্থল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর এএফপির।
আতঙ্কের বড় কারণ ‘সার্স’ এর ভয়াবহতা আগেও দেখেছে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশ। ২০০২ থেকে ২০০৩ সালে চীন ও হংকংয়ে ৬৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এখন পর্যন্ত ৪১ জনের নতুন এই ভাইরাসের আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৭শ।
সর্বশেষ যিনি মারা গিয়েছেন, তার রোগ ধরা পড়েছিল গত বছর ৩১ ডিসেম্বর। পাঁচ দিনের মধ্যেই অবস্থার ভয়াবহ অবনতি ঘটে। ফুসফুসে যক্ষ্মার সংক্রমণ হয়ে শরীরের একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার।
এরই মধ্যে থাইল্যান্ড ও জাপানেও এই ভাইরাস সংক্রমণের খবর মিলেছে। কিন্তু দু’দেশের ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, আক্রান্তেরা সম্প্রতি চীনের উহান প্রদেশে গিয়েছিলেন।
উহান প্রশাসনের সন্দেহ, সি-ফুড বাজার থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো মানুষের থেকে অন্য মানুষের শরীরে সংক্রমণের জোরদার প্রমাণ মেলেনি। যদিও এই আশঙ্কা এখনই উড়িয়ে দিতে রাজি নয় প্রশাসন।
চীনের উহান থেকে আসা যাত্রীদের সিঙ্গাপুর এবং হংকংয়ের বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রও ঘোষণা করেছে যে, তারা শুক্রবার থেকে সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলস এবং নিউইয়র্কের প্রধান বিমানবন্দরে একই ধরনের কার্যক্রম শুরু করবে। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্বারা এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র জানিয়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রথমেই যে লক্ষণগুলো পাওয়া গেছে সেগুলো হলো, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশি। এ থেকে প্রথমেই মনে হতে পারে যে রোগী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, যদি সামান্য কিছু মানুষের থেকে অন্য মানুষের দেহে সংক্রমণের ঘটনা জানা যায়, সেটা খুব অবিশ্বাস্য হবে না। বিশেষ করে একই পরিবারের সদস্যের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতেই পারে। যেমন, ভাইরাস আক্রান্ত একটি লোক সি-ফুড হোলসেল মার্কেটে কাজ করতেন বলে জানা গিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রহস্যময় ভাইরাসটি করোনাভাইরাস পরিবারের হতে পারে। এই ভাইরাস কখনও কখনও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। সামান্য সর্দিজ্বরকে ‘সার্স’ বা ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরাটরি সিন্ড্রোম’ এর মতো ভয়াবহ রোগে রূপান্তরিত করতে পারে।
‘সার্স’ এর খবর প্রথম মিলেছিল ২০০২ সালে দক্ষিণ চীনে। এরপর পৃথিবীর অন্তত ৩৭টি দেশ থেকে আট হাজার মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর মেলে। ৮০০ লোক মারা গিয়েছেন।