শেয়ারবাজার : বিনিয়োগকারীদের নজর জরুরি বৈঠকে

মত ও পথ প্রতিবেদক

শেয়ারবাজার
ফাইল ছবি

শেয়ারবাজার উন্নয়নে আজ সোমবার জরুরি বৈঠকে বসছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উদ্যোগে গঠিত সমন্বয় ও তদারকি কমিটি। ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) কার্যালয়ে দুপুর ২টায় এ বৈঠক শুরু হবে।

ধারণা করা হচ্ছে এই বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতে শেয়ারবাজারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হবে। যে কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ তাকিয়ে আছেন এ বৈঠকের দিকে। বৈঠক থেকে কী সিদ্ধান্ত আসে তা জানার জন্য উদগ্রীব তারা।

এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী মনির হোসেন বলেন, শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক ধসের কারণে অনেক লোকসানে আছি। তবে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নেয়ায় এখন বাজারে গতি ফিরেছে। এ পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার তদারকি কমিটির বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করছি বৈঠক থেকে বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো সিদ্ধান্ত আসবে।

শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধসের প্রেক্ষাপটে গত ১৪ জানুয়ারি জরুরি এই বৈঠকের ডাক দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অতিরিক্ত সচিব মাকসুরা নূরের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজার উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে সে বিষয়ে তথ্য তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে কোন পদক্ষেপের ফলে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সে বিষয়ে ধারণা দেয়া হবে। এর ভিত্তিতে বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে নেয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজার পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হবে। তবে স্টেকহোল্ডারদের জন্য স্বল্পসুদে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ঋণ তহবিলের ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করা হবে।

শেয়ারবাজারের তারল্য সংকট কাটাতে গত বছরের অক্টোবর থেকেই এ তহবিল চাচ্ছেন স্টেকহোল্ডারদের একটি অংশ। তবে তহবিল চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়া হয় গত ডিসেম্বরে।

এ তহবিল চাওয়ার যুক্তি হিসেবে সে সময় বলা হয়, পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিতে ও স্টেকহোল্ডারদের সক্ষমতা বাড়াতে স্বল্পসুদে ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড খুবই জরুরি। ছয় বছর মেয়াদে তিন শতাংশ সুদে এই অর্থ পেলে স্টেকহোল্ডারদের সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখতে পারবে।

তহবিল চাওয়া স্টেকহোল্ডারদের দাবি, অর্থ মন্ত্রণালয় ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় কাজ করছে। এরই মধ্যে কতিপয় সংশোধন বা নীতি সহায়তা পেলেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূমিকা রাখতে পুঁজিবাজার লড়ছে। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের নিম্নমুখী অবস্থার সৃষ্টি হলেও চলতি বছরের (২০১৯ সাল) শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় মূল্যসূচক বৃদ্ধি পায়। তবে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় না থেকে বাজার ক্রমেই নিম্নমুখী অবস্থার দিকে ধাবিত হয়েছে।

তারা জানান, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক এক হাজার ২৪২ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে। শতকরা হিসাবে ২০.৮৭ শতাংশের বেশি সূচক কমে গেছে। আর বাজার মূলধন কমেছে ৬৫ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।

নিম্নমুখী এই অবস্থায় গত আগস্ট পর্যন্ত মার্জিন ঋণে নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ ১১ হাজার কোটি টাকা। ক্রমাগত নিম্নমুখী অবস্থায় তারল্য সংকটের কারণে বাজারের স্টেকহোল্ডার স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংক সক্রিয় হতে পারছে না। এই অবস্থায় ‘ক্যাপিটাল মার্কেট সাপোর্ট ফান্ড ফর ক্যাপিটাল মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিজ’ নামে স্কিমের আওতায় ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড প্রয়োজন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে