প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের গণতান্ত্রিক অনুপ্রেরণাদায়ী ধারণাকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির মাধ্যমে বিপন্ন করে তুলছে বলে এক নিবন্ধে দাবি করেছে ব্রিটিশ পত্রিকা ইকোনমিস্ট।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-র প্রতিবেদনে বলা হয়, ইকোনমিস্ট পত্রিকার সর্বশেষ সংখ্যার মূল নিবন্ধ ‘অসহিষ্ণু ভারত’-এর মধ্যে ওপরের মন্তব্য করা হয়।
বৃহস্পতিবার এক টুইটে ইকোনমিস্ট তাদের প্রচ্ছদটি শেয়ার করে লিখেছে, যেভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও তার দল বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে বিপন্ন করছে।
‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে বিভাজন উসকে দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী’ শিরোনামের এ নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী একটি হিন্দু রাষ্ট্র বানাচ্ছেন বলে দেশটির ২০ কোটিরও বেশি মুসলমান আশঙ্কা করছে।
গত শতকের ৮০-র দশক থেকে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের আন্দোলন থেকে শুরু করে বিজেপির উত্থানের চিত্র তুলে ধরে এতে ‘মোদী ও তার দল ভারতে ধর্মীয় এবং জাতীয় পরিচয় নিয়ে বিভাজন সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টায় মত্ত’ বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্তে ভারতীয়দের নাগরিকপঞ্জি বানানোর এ পরিকল্পনা দেশটির ১৩০ কোটি মানুষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তালিকায় নাম সংকলন, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এবং সংশোধনী বছরের পর বছর ধরে উত্তেজনা জিইয়ে রাখতে পারে।
এ ধরনের ইস্যু জনগণকে বিভ্রান্ত করে অর্থনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দিতে ভূমিকা রাখবে বলেও ধারণা লন্ডনভিত্তিক এ সংবাদমাধ্যমটির।
গত বছরের নির্বাচনে বিজেপির ব্যাপক জয়লাভের পর থেকে ‘ভারতের অর্থনীতি ভয়াবহ মাত্রার শ্লথ’ উল্লেখ করে এ নিয়ে উদ্বেগের কথাও বলেছে তারা।
তবে ইকোনমিস্ট পত্রিকার এ নিবন্ধের তীব্র সমালোচনা করেছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি।
বিজেপি’র পররাষ্ট্র নীতি ঠিক করার দায়িত্বে থাকা বিজয় চৌথাইওয়ালে ইকোনমিস্টকে ‘উদ্ধত, যাদের মানসিকতা ঔপনিবেশিক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
“আমরা ভেবেছিলাম যে ১৯৪৭ সালেই ব্রিটিশরা চলে গেছে। কিন্তু ইকোনমিস্টের সম্পাদকরা এখনও ঔপনিবেশিক যুগে বসবাস করছেন। ৬০ কোটি ভারতীয় তাদের নির্দেশ না মেনে মোদীকে ভোট দেয়ার পর থেকেই তারা ক্ষিপ্ত,” টুইটারে বলেছেন বিজেপির পররাষ্ট্র নীতি ঠিক করার দায়িত্বে থাকা চৌথাইওয়ালে।
বৈশ্বিক সূচকে পতনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভারত সরকারের সাম্প্রতিক বেশ কিছু সিদ্ধান্তকে দায়ী করেছে ইআইইউ। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি।
গত ২২ জানুয়ারি লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইকোনমিস্ট পত্রিকার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইআইইউ-র বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচকে ১০ ধাপ পিছিয়েছে ভারত। ২০১৮ সালে ৭ দশমিক ২৩ পয়েন্ট নিয়ে ভারতের অবস্থান ছিল ৪১তম। সেখানে ২০১৯ সালে ৬ দশমিক ৯০ পয়েন্ট নিয়ে ভারতের অবস্থান ৫১তম।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের আগে কাশ্মীর উপত্যকায় বিশাল সংখ্যক সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করেছিল ভারত। সেখানে কারফিউ জারি, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ, সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দীসহ হাজার হাজার কাশ্মীরের নাগরিককে গ্রেপ্তারের অভিযোগ রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে।
প্রতিবেদনে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন সম্পর্কে বলা হয়, মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ দেশের মুসলিমরা। তারা আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। ভারতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরিতে আইনটি ইন্ধন জুগিয়েছে বলে মনে করছে ইআইইউ।