ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ‘আমি নির্ভয়, আমি অদম্য’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হলো। কর্মশালা যৌথভােব আয়োজন করেছে ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং ঢাবি হিমু পরিবহন।
এ আয়োজনের মাধ্যমে ছাত্রীদের নিপীড়নমূলক আচরণ এবং অপ্রত্যাশিত স্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষার কৌশল সম্পর্কে অবহিত করার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সোচ্চার হতে আহবান জানান আলোচকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সুইমিংপুলে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, বাংলােদশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, ডাকসুর এজিএস ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার, জাতীয় অ্যাথলেট শিরিন সুলতানা, কবি শরাফত হোসেন, কারাতে ট্রেইনার নয়না চৌধুরী, কারাতে ট্রেইনার ও গণমাধ্যমকর্মী ইশতিয়াক মাহমুদ, ডাকসু সদস্য তিলোত্তমা শিকদার, ফরিদা পারভীন, মাহমুদুল হাসান, রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সায়মা আক্তার প্রমি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। কর্মশালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেছেন।
কর্মশালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘নারীদের আত্মরক্ষার জন্য কৌশলগুলো শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন আয়োজনের জন্য আয়োজকদের সাধুবাদ জানাই। সমাজের কাছে নারী অনেকটা পুতুলের মতো। তারা জোরে কথা বললে দোষ, হাসলে দোষ, আরও কত কী! সামাজিক অনেক রীতিনীতি দিয়ে নারীদের পিছিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি উন্মুক্ত ক্যাম্পাস। প্রশাসনের কিছু জায়গায় বিধি-নিষেধ আরোপ করা উচিত। এতে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না।’
বাংলােদশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, নারীকে পিছিয়ে রেখে, অধিকার থেকে বঞ্চিত করে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থীদের জন্য অধিকতর নিরাপদ করতে হবে। প্রতিটি নির্যাতনের ঘটনার কঠোর ও দ্রুত বিচার দাবি করেন জয়।
ঢাবিতে ‘সেক্সুয়ালি হেরাজমেন্ট কোর্ট’ গঠন করার দাবি জানিয়ে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘লিঙ্গ বৈষম্যে রুখে দিতে আমাদের এই আয়োজন। একটি ছেলে যেসব সুবিধা পায়, একজন মেয়ে সেসব সুবিধা না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই করে যেতে হবে। আত্মরক্ষার কৌশল আপনাদের রক্ষা করতে সাহায্য করবে।’
পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার বলেন, ‘আমরা শুধু সহ্য করে যাব? না, আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে, নিজেদের শক্ত হতে হবে। নারী দুর্বল নয়, নারী পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী।’
শারমিন সুলতানা বলেন, ‘নারীর জন্য সমাজ হোক সুন্দর। নারীকে শারীরিক নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে আগে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে।’
কবি শরাফত হোসেন বলেন, পারিবারিক সম্মানের কথা ভেবে অনেক নারী নির্যাতনের কথা প্রকাশ করেন না। নরীকে সোচ্চার হতে হবে। সামাজিক ট্যাবু ভেঙে নিজের অধিকার বিষয়ে সচেতন হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
কর্মশালার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ডাকসু সদস্য ও সিনেট সদস্য তিলোত্তমা শিকদার, হিমু পরিবহনের সহ-সভাপতি জান্নাতুল তাজরিন নিপা। সঞ্চালনা করের নাদিয়া মুমেন। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করা হয়।