চীন থেকে বাংলাদেশিদের ফেরাতে বিশেষ ফ্লাইট পাঠাবে সরকার

মত ও পথ প্রতিবেদক

চীনের উহানে গৃহবন্দী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী
চীনের উহানে গৃহবন্দী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। ছবি : সংগৃহিত

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকা চীনের উহানে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের ফেরাতে প্রয়োজনে বিমানের বিশেষ ফ্লাইট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এসব কথা জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার জন্য এরই মধ্যে চীন সরকারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। তবে এরই মধ্যে ফিরিয়ে আনা-সংক্রান্ত সব প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা।

universel cardiac hospital

শাহরিয়ার আলম বলেন, চীন থেকে যাদের ফিরিয়ে আনা হবে তাদের দেশে আনার পর বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় সতর্কতা জারির ব্যবস্থা নেবে সরকার।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, চীন থেকে যারা ফেরত আসতে চান তাদের আনার ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। তারই প্রেক্ষিতে আমরা চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এখন তাদের প্রাথমিক সিদ্ধান্তের ওপরই আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের ফেরত নিয়ে আসাটাও যে সব সমস্যার সমাধান তা নয়। আমরা সেখানে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। অনেকে বলছেন, আমরা এখানে ভালো থাকব। অনেকে মনে করছেন, দেশে ফিরলে ভালো থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে আসলে অনেকে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। তবে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি হতবিহ্বল না হওয়ার।

তিনি আরও বলেন, আমরাসহ আরও কিছু রাষ্ট্র চীন সরকারকে জানিয়েছি যে, আমরা নিজেদের নাগরিকদের ফেরত নিয়ে যেতে চাই। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করবে চীনের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর। তবে ইতোমধ্যে আমরা বিমানের সাথে কথা বলে রেখেছি। প্রয়োজনে চীনের উহানে বিশেষ ফ্লাইট পাঠানো হবে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ফেরত আনা বাংলাদেশিদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হবে। বিশেষ করে করোনা ভাইরাস মানুষের শরীরে ১৪ দিন সুপ্ত অবস্থায় থাকে। এ সময়টা তাদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। সেসব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

প্রাথমিকভাবে উহান শহরে থাকা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা রয়েছেন উল্লেখ করে সেখানে বাংলাদেশিদের সংখ্যা কমবেশি ৩০০-এর মতো হবে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

চীনে সফরের নিষেধাজ্ঞার কথা সরকার ভাবছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতি বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সাথে অর্থনীতির বড় সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্প, ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানি অনেক কিছু জড়িত। বিভিন্ন দেশ এখনো চীনের সাথে এসব সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

করোনা ভাইরাস ভয়াবহ রূপ নিলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিষয় ভেবে দেখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, চীনে এ ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বিভিন্ন সতর্কতা দিচ্ছে। যারা যাচ্ছেন বা যাবেন তারা যেন এসব বিষয়ে সতর্ক থাকেন।

উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে অনতিবিলম্বে আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলের উহানে প্রথমবারের মতো প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। এরপর এ ভাইরাস চীনের বিভিন্ন শহরের পাশাপাশি ইতোমধ্যে বিশ্বের এক ডজনের বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনা কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। সাধারণ ফ্লুর মতোই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে এ রোগের ভাইরাস।

চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে ৮০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া আরও দুই হাজার ৭৪৪ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে