জনগণের খেদমত ও উন্নয়নে জীবন উৎসর্গ করব : ইশরাক

মত ও পথ প্রতিবেদক

নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন
নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। ফাইল ছবি

জনগণের খেদমত এবং তাদের উন্নয়নে নিজের জীবন উৎসর্গ করবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।

আজ সোমবার দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।

ইশরাক বলেন, ১৮ দিন ধরে আপনারা আমার নির্বাচনী প্রচারণার কাজ নিরলসভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরছেন, সেজন্য আমি সাংবাদিক ভাই-বোনদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাস করি। আমি মনে করি, জনগণ হবে একটা দেশের ও ক্ষমতার মালিক।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন, ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে অযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে উঠেছে। বায়ুদূষণের দিক দিয়ে আমরা সবচেয়ে দূষিত নগরীর তালিকার এক নম্বরে আছি। কিছুদিন আগে নারী ও শিশুদের জন্য অনিরাপদ শহরের তালিকা প্রকাশ হয়েছে, সেই তালিকায়ও ঢাকা ছিল এক নম্বরে। আমি ঢাকার সন্তান। এখানে আমার বেড়ে ওঠা। এই সমস্যাগুলোর মধ্য দিয়ে আমি বেড়ে উঠেছি। এ সমস্যাগুলো আমার জানা।

তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে মেয়র হিসেবে নির্বাচন করার জন্য আমাকে বিএনপির পক্ষ থেকে একটা গুরু দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমি আপনাদের বলতে চাই, এই শহরকে বাসযোগ্য করার জন্য যা যা করণীয় আমি সব করব। জনগণের খেদমত এবং নগরবাসীর উন্নয়নে আমার জীবন উৎসর্গ করব।

বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক দল উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাসী এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। যেখানে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) তার নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার নিন্দা জানিয়ে বিএনপির এ মেয়রপ্রার্থী বলেন, আপনারা জানেন, গত ১৮ দিন ধরে আমি আমার প্রচারণা শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে আসছিলাম। বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছি। সবাই আমাকে খুব সাদরে গ্রহণ করেছেন। ওইসব এলাকায় আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমর্থিত কাউন্সিলরদের সঙ্গে আমি দেখা করেছি, কথা বলেছি, মতবিনিময় করেছি। কিন্তু গতকাল প্রচারণা শেষে ৪১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে দিয়ে আসার সময় বাসার ছাদ থেকে অতর্কিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে তিনজন সাংবাদিকসহ ১২ জন নেতাকর্মী আহত হন।

বিএনপি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, আমাদের দল বিএনপি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে বিশ্বাস করে। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক আমরা সেটাই প্রত্যাশা করি এবং চাই। ইভিএম নিয়ে আমাদের দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে জানানো হয়েছে। সেটাতে স্পষ্ট পরিষ্কার হয়েছে যে, ইভিএমের মাধ্যমে ভোট কারচুপি এবং জালিয়াতি সম্ভব। আমরা যেহেতু একটি গণতান্ত্রিক দল তাই নির্বাচনে থাকব এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।

গতকালের হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত বিএনপির পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমরা গতকাল থেকে আশঙ্কা করেছিলাম যে, আমাদের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু করবে। সেটাই হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের পাঁচজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওয়ারী থানায় আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটা মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, নির্বাচনের প্রচারণা সমানভাবে করার সুযোগ আমাদের দেয়া হোক। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে মামলা হামলা করে মাঠ খালি করার একটা কাজ করা হয়েছিল, সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দক্ষিণে আমি নির্বাচনের সমন্বয়কের দায়িত্বে আছি এবং নির্বাচনের প্রচারণা চালাচ্ছি। গত কয়েক দিনে যা দেখলাম, ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গত ১০ বছরে সিটি করপোরেশন যারা পরিচালনা করেছেন জনগণ তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ। তাই জনগণ পরিবর্তন চায়। অতীতের সব বাদ দিয়ে এখন যে নির্বাচন হচ্ছে সে নির্বাচনে জনগণ যাতে তাদের ভোট দিতে পারে এবং তাদের অধিকার তারা ব্যক্ত করতে পারে সেই প্রত্যাশা করছি।

বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের প্রতি চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, প্রচারণায় আমাদের কাউন্সিলর প্রার্থী এবং সমর্থকদের ওপর হামলা, আক্রমণ করা হচ্ছে। তাদের বাড়িতে গিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে। গতকাল আমাদের মেয়রপ্রার্থীর প্রচারণায় হামলা চালানো হয়েছে। এটা কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নয়। আমরা দেখছি, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের যে পরিবেশ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হওয়ার কথা সেটা এখনো হয়নি।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিবউন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খানসহ বিভিন্ন সাংবাদিক নেতা।

প্রেস ক্লাব থেকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি এবং ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন ইশরাক।

এদিন দুপুর আড়াইটা থেকে খিলগাঁও থানার জোড় পুকুর পাড় থেকে ১৯তম দিনের প্রচারণা ও গণসংযোগ শুরু করবেন তিনি। পর্যায়ক্রমে খিলগাঁও, সবুজবাগ, মুগদা, মতিঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন থানার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচারণা চালাবেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে