‘জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ মোটেও দায়ী নয়’

বিশেষ প্রতিবেদক

শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ মোটেও দায়ী নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার সকালে বাংলাদেশ ডেভলোপমেন্ট ফোরামের (বিডিএফ) দু’দিনব্যাপী সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ মোটেও দায়ী নয়। পৃথিবীর অন্যান্য ছোটখাটো দেশও দায়ী নয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য উন্নত দেশগুলো দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ছোট দেশগুলোর যে ক্ষতি হয় তার জন্য বড় দেশগুলোর সবচেয়ে বেশি করে অবদান রাখা দরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব-দ্বীপ অঞ্চল। এই বদ্বীপ অঞ্চলে মানুষ নানাভাবে দুর্যোগের শিকার হয়। ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসে এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘূর্ণিঝড় থেকে মানুষ ও গবাদি পশু বাঁচানোর জন্য মাটি কেটে উঁচু ডিপি তৈরি করে দেন। যেগুলোকে বলা হয় মুজিব কেল্লা। দুর্যোগের সময় এই মুজিব কেল্লায় আশ্রয় নিয়ে হাজার হাজার মানুষ ও পশু পাখি জীবন বেঁচেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর মানুষ যাতে ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য বহুসংখ্যক সাইক্লোন সেন্টার এবং ঘূর্ণিঝড় সহনশীল বাড়ি করে দিয়েছি। এর ফলে এখন ঘূর্ণিঝড় বা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে কম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাইক্লোন সেন্টারগুলোকে সারাবছর অফিস ও স্কুল হিসেবে ব্যবহার করা হয় আর ঘূর্ণিঝড়ের সময় সেগুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ওই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় সহনশীল ঘরবাড়ি করে দেয়ার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা নদী ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে দুই তীরে প্রচুর জমি বা ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হবে। নদীর দুই পাড়ে ভূমি উদ্ধার করা গেলে সেখানে যেমন শিল্প-কলকারখানা গড়ে তোলা সম্ভব তেমনি শহর ও বসবাস গড়ে তোলা সম্ভব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪৯২টি উপজেলায় আমরা কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব শুরু হওয়ার আগে আমাদের দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। যাতে আমরা পিছিয়ে না থাকি। আমাদের আরও দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য আমরা বিভিন্নভাবে ট্রেনিং দিয়ে তাদের যোগ্য করে গড়ে তুলছি। আমরা বাংলাদেশ থেকে জঙ্গি, মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দূর করতে চাই। এজন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ছোটবেলা থেকেই ছেলেমেয়েরা যাতে খেলাধুলা, সাহিত্যচর্চা করতে পারে, সে ব্যবস্থা আমরা প্রতিটি উপজেলায় রাখছি। প্রত্যেক উপজেলায় একটা করে মিনি স্টেডিয়াম করে দিচ্ছি। যেখানে ছেলেমেয়েরা শরীরচর্চা করবে। এ ছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় লাইব্রেরি থাকবে, যেখানে সাহিত্যচর্চা হবে। ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো শরীরচর্চা এবং খেলাধুলা করতে পারলে তারা অলিম্পিকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ গান এবং নৃত্যের মধ্য দিয়ে প্রধান অতিথিকে স্বাগত জানানো হয়।

আজ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার আহমেদ। এ ছাড়া এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক ও জাইকার প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ওপর একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা দু’দিনব্যাপী আয়োজিত এ সেমিনারে আটটি সেশনে অংশগ্রহণ করবেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে