প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখন থেকে শুধুমাত্র চীন থেকে আগত চারটি ফ্লাইট নয়, বিমানবন্দরে আগত সব ফ্লাইটের যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনতে হবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শাহজালাল বিমানবন্দরে চীন থেকে আগত যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানার ও হ্যান্ড স্ক্যানারের সাহায্যে স্ক্রিনিংসহ সার্বিক সতর্ক ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী বিমানবন্দরে যাত্রী স্ক্রিনিংসহ (পরীক্ষা) যেভাবে বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তা যথাযথভাবে অনুসরণ করে কার্যক্রম চলছে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সব এয়ারলাইন্স স্বাস্থ্য তথ্য কার্ড, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র ও পাবলিক হেলথ প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফ্রম ছাপিয়ে যাত্রীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। সভায় এ কাজের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে আরও সমন্বয় সাধন করে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, চীন ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়ায় অধিকতর সতর্কতার জন্য দেশটি থেকে আগত চারটি ফ্লাইট ছাড়াও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আগত প্রতিটি ফ্লাইটের যাত্রীদের জ্বর মাপার যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষার পাশাপাশি সকল ফ্লাইটে হেলথ কার্ড বিতরণ করা হবে। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে কোনোভাবেই যেন এ ভাইরাস দেশে ঢুকতে না পারে। এরপরও যদি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়, তাদেরকে পৃথকভাবে রেখে সুচিকিৎসা প্রদানের জন্য রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আজকের সভায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক সানিয়া তহমিনা, রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা, পরিচালক শাহজালাল বিমানবন্দর, সিভিল এভিয়েশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় গত ২১ জানুয়ারি থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকল যাত্রী, বিশেষ করে চীন থেকে প্রতিদিন চারটি ফ্লাইটের আসা যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানার ও হ্যান্ড স্ক্যানার (জ্বর পরিমাপক যন্ত্র) দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত চীন ফেরত ৩ হাজার ৭৫৪ জন যাত্রীর স্ক্রিনিং সম্পন্ন হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। তবে করোনাভাইরাস সন্দেহে রাজধানীসহ সারা দেশের দুটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে একজন চীনা নাগরিকসহ তিনজন ভর্তি হন। তাদের মধ্যে দুজন ইতোমধ্যে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন। নমুনা পরীক্ষায় কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। আজ সকালে চীন ফেরত এক যুবককে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জ্বর নিয়ে ভর্তি হলেও আগের তুলনায় তার জ্বর কমেছে বলে জানা গেছে।
বিমানবন্দরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সকল এয়ারলাইন্সে হেলথ কার্ড বিতরণসহ সামগ্রিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আগামী রোববার শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিমানবন্দরে চীন থেকে আগত স্ক্রিনিং করা যাত্রীর সংখ্যা ৪০৬ জন। আইইডিসিআরের হটলাইনে মোট কলের সংখ্যা ৭৩টি। আইইডিসিআর করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সেবা গ্রহীতার সংখ্যা ৮ জন। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি।