চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণে এ পর্যন্ত ১৭০ জন নিহত হলেও গুরুতর অসুস্থ হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। বিশ্বের দেশে দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এ রোগ।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। এরইমধ্যে অন্তত ১৯টি দেশে এ ভাইরাস পড়েছে। তাই সর্দি-কাশি হলেই করোনাতে আক্রান্ত হয়েছেন মনে করে আতঙ্কিত হচ্ছেন কেউ কেউ।
ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর উপসর্গের কথা জানিয়েছেন ভাইরোলজিস্টরা।
যদিও এখন পর্যন্ত এর কোনো কার্যকর ভ্যাকসিন আবিস্কার না হলেও কীভাবে এর থেকে বাঁচা যাবে সে বিষয়ে গাইডলাইন দিয়েছেন তারা।
এবার করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে বেশ কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ওয়েবসাইটে এসব নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি সোশাল মিডিয়ায় সচেতনতামূলক বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে ডব্লিউএইচও।
করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে ডব্লিউএইচও যেসব পরামর্শ দিয়েছে –
১. সাবান ও পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে হবে।
২. মাংস ও ডিম অবশ্যই যথাযথ তাপে ও ভালোমত রান্না করে খেতে হবে।
৩. রোগে ভুগে মারা যাওয়া বা অসুস্থ প্রাণীর মাংস একেবারেই খাওয়া চলবে না।
৪. হাঁচি ও কাশি দিলে অবশ্যই টিস্যু দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে হবে। এরপর টিস্যু ফেলে দিতে হবে নির্ধারিত স্থানে। এবং অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে।
৫. অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার পর হাত ধুতে হবে।
৬. হাতে গ্লাভস না পরে বা নিজে সুরক্ষিত না থেকে কোনো অসুস্থ ব্যক্তির মুখ ও দেহ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৭. বিড়াল, কুকুর বা পোষা পাখির যত্ন নিলে বা স্পর্শ করলে হাত ধুতে হবে। প্রাণিবর্জ্য ধরার পর সঙ্গে সঙ্গে হাতে ধুয়ে জীবাণু মুক্ত করতে হবে।
৭. শরীরে যে কোনো সংক্রমণ এড়াতে রান্না ও খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
৮. কাঁচা মাংস, সবজি, রান্না করা খাবার কাটার জন্য ভিন্ন চপিং বোর্ড ও ছুরি ব্যবহার করতে হবে।
৯. কাঁচা মাংস, সবজি ও রান্না করা খাবার হাতে ধরার আগে অবশ্যই প্রত্যেকবার হাত ধুয়ে নিতে হবে।
১০. কাঁচা বাজারে গিয়ে কোনো প্রাণী ও প্রাণীর মাংস হাতে ধরলে দ্রুত হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
১১. কাঁচা বাজারে অবস্থানের সময় অযথা মুখে-চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১২. অবশ্যই প্রতিদিন ধোয়া কাপড় পড়তে হবে। একই কাপড় একদিনের বেশি পরা ঠিক নয়। নিয়মিত কাপড় ধুতে হবে।
১৩. জ্বর-সর্দি অনুভূত হলে যে কোনো ভ্রমণ বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও ওষুধ খেতে হবে।
১৪.ভ্রমণে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
১৫ জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে ঘনিষ্ট হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৬. নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক না থাকলে নাক ও মুখ ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে।
১৭. একবার মাস্ক পরলে তা বার বার স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৮. একবার মাস্ক ব্যবহারের পর ফেলে দিতে হবে। মাস্ক ধরার পর হাতে ধুয়ে নিতে হবে।
১৯. রোগের ইতিহাস থাকলে চিকিৎসককে বিস্তারিত জানাতে হবে।
২০. যেখানে সেখানে থুথু ফেলা যাবে না।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে লক্ষণ –
নতুন এ করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। লক্ষণগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। শুরুটা হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্টও।
প্রসঙ্গত গত বছরের শেষে চীনের উহানে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কয়েকটি ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এর এক সপ্তাহ পর নতুন ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। যা এখন মহামারি রূপ নিচ্ছে।
এদিকে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষায় সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বাংলাদেশে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এ ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হয়েছে বলে শনাক্ত হয়নি।
তবে বিদেশফেরত এক যাত্রীকে বৃহস্পতিবার করোনা সন্দেহে বিমানবন্দর থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, এ পর্যন্ত চীন থেকে ৩৩৪৮ জন বাংলাদেশে এসেছেন। তাদের মধ্যে সন্দেহজনক কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। তাদের ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।
চীন থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশে আসা পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৩৫ কর্মীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।