ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের প্রতিচ্ছবি দেখছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঢাকা শহরের মহল্লায় মহল্লায় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী দিয়ে মহড়া ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। বিএনপির মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থী ও কর্মীদের নির্বাচনী প্রচার থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। হুমকি দিয়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ক্রমাগত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মহল্লায় মহল্লায় প্রচার চালাচ্ছে। রঙিন পোস্টার, বিরোধী দলের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, ফুটপাথের ওপর নির্বাচনী অফিস নির্মাণ, পুলিশ কর্তৃক বিএনপি নেতাকর্মীদের বেআইনিভাবে গ্রেফতার এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের উসকানিমূলক বক্তব্য, নির্বাচনের পরিবেশকে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদের নির্বাচনের দিকে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, উত্তরের বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণের বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের ওপর শারীরিক আক্রমণ, গুলিবর্ষণ এবং নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণকারী কর্মীদের ওপর আক্রমণ, আহত করা এবং পরে মিথ্যা মামলায় বাড়িতে বাড়িতে পুলিশের তল্লাশি এবং গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে পুনরায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য থেকে এটি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আওয়ামী লীগ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত সন্ত্রাসীদের ঢাকায় জড়ো করে ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। পুলিশও একই ভূমিকা পালন করে চলেছে। ইতোমধ্যে বিএনপির অনেক সাবেক এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা চিকিৎসার জন্য অথবা ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় এসেছিলেন তাদের বেআইনিভাবে গ্রেফতার করে পূর্বের ন্যায় একতরফা নির্বাচন করতে চলেছে।
তিনি বলেন, ঢাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে। ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগ মেয়রপ্রার্থী বিএনপি প্রার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে দোষারোপ করার মধ্য দিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে পূরণ করতে চলেছে।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা এবং উদাসীনতায় ও সরকারের নির্দেশে কাজ করার কারণে এই নির্বাচনও দলীয়করণ করা হয়েছে, যা ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। হাজারো নির্বাচন বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি নির্বাচন কমিশন।
বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এই নির্বাচনী প্রচারে বিএনপি প্রার্থীদের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। হাজারো মানুষ দখলদারি সরকারের বিরুদ্ধে তাদের রায় দেয়ার জন্য যখন বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে, তখনই নিয়ন্ত্রিত পুলিশ বাহিনী দিয়ে মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার করে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
‘আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই– ধানের শীষের প্রার্থীদের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তাকে রোধ করার শক্তি এই দখলদারি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নেই। কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি গণবিরোধী কার্যকলাপ থেকে বেরিয়ে এসে সংবিধানে প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করুন। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করুন এবং ভোটাররা যেন নির্ভয়ে সুষ্ঠু পরিবেশে তাদের মতামত প্রদান করতে পারে তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। অন্যথায় বাংলাদেশের জনগণ কোনোদিনও আপনাদের ক্ষমা করবে না। সংবিধান লংঘন এবং জনগণের অধিকার হরণের অভিযোগে আপনাদের জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে’-যোগ করেন ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো জনসমর্থন নেই। তারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, হত্যা, শিশুসহ সব বয়সের নারী ধর্ষণ, অসহনীয় ট্রাফিকব্যবস্থা, সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, শেয়ারবাজার লুট, মেগাপ্রজেক্টের নামে মেগালুট, জনজীবনকে দুঃসহ করে তুলেছে।
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে রাজনীতি থেকে দুরে রেখে একতরফাভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়ার চক্রান্ত করছে।