বাংলাদেশ এখন উন্নয়নমুখী একটা ট্রান্সফরমেশন বা পরিবর্তনীয় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আজকে যেসব দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ, তাদের সবাইকে এ রকম একটা সময় পার করতে হয়েছে। এ সময়টা অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল। বড় ধরনের কোনো ভুল সমগ্র অগ্রযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে। তাই সবাইকে যেমন সতর্ক হওয়া দরকার, তেমনি রাষ্ট্রের দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের কাছ থেকে দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণতা এবং একই সময়ে দৃঢ়তা জরুরি। সব যুগে সব দেশে রাষ্ট্র ও জনস্বার্থবিরোধী একটা গোষ্ঠী ছিল এবং এখনো আছে, তারা সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও দেশ ও রাষ্ট্রের সর্বনাশ করার জন্য যথেষ্ট। এই শ্রেণির মানুষ নিজের ও গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য সব সময় দেশ ও জাতির স্বার্থকে বিসর্জন দেয়। ব্রিটিশ আমলে এ দেশের ক্ষুদ্র একটা গোষ্ঠী ইংরেজদের কাছ থেকে সামান্য উপঢৌকন, যেমন—খানবাহাদুর, রায়বাহাদুর ইত্যাদি খেতাব নিয়ে ইংরেজদের শাসনকে দীর্ঘায়িত করার সুযোগ করে দিয়েছে। এই সহযোগিতা ও সমর্থন না পেলে ইংরেজ জাতি ভারতবর্ষকে ২০০ বছর শাসন ও লুণ্ঠন করার সুযোগ পেত না। ঠিক একইভাবে ১৯৭১ সালে এ দেশের জামায়াত-মুসলিম লীগ ও তাদের দোসররা যদি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী না হতো, তাহলে গ্রামে-গঞ্জে, অলিগলিতে ঢুকে তারা এত বড় গণহত্যা চালাতে পারত না। সুতরাং আগের মতো এখনো দেশের ভেতরে একটা গোষ্ঠী রয়েছে, যারা নিজেদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধারে যখন ব্যর্থ হয় তখন দেশের সব অর্জনকে শুধু অস্বীকার নয়, সেটাকে জলাঞ্জলি দেওয়ার জন্য গেল গেল বলে মানুষের মধ্যে হাহাকার ছড়িয়ে দেশকে পেছনে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে দেশের বৃহত্তর মানুষ, যারা একাত্তরের মতো দেশকে ভালোবাসে তাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক খবর রয়েছে। বিশ্বের খ্যাতনামা প্রভাবশালী পত্রিকা দি ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স শাখা প্রতিবছরের মতো ২০১৯ সালে ১৬৫টি দেশের গণতন্ত্রের মান কেমন ছিল তার মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ১৬৫টি দেশের মধ্যে গুণগত মানে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের সূচকে আট ধাপ এগিয়েছে। বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশ ৮৮তম স্থান থেকে এবার ৮০তম স্থানে উঠে এসেছে। ৭২ বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রচর্চার দেশ প্রতিবেশী ভারত যেখানে ১০ ধাপ নিচে নেমে গেছে এবং বৈশ্বিক সূচকের গড় যখন নিম্নগামী তখন সেখানে বাংলাদেশের আট ধাপ অগ্রগতি নিঃসন্দেহে একটা সুখবর, যদিও গণতন্ত্রের পথে এখনো আমাদের হাঁটতে হবে বহুদূর। দি ইকোনমিস্টের আলোচ্য এই প্রতিবেদন এই সময়ে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রথমত, বিএনপি-জামায়াত জোট ও তাদের নতুন মিত্রপক্ষের প্রপাগান্ডা এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে অসার প্রমাণিত হয়েছে। কোনো রকম তুলনামূলক চিত্র ব্যতিরেকে তাদের একতরফা ঢালাও বক্তব্য শুনলে কারো মনে হতে পারে, তাহলে হয়তো আগে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে গণতন্ত্রের মান এখনকার চেয়ে ভালো ছিল। তা যে নয়, সেটাই প্রমাণিত হয়েছে এক বছরে আট ধাপ অগ্রগতির মাধ্যমে, যেখানে বৈশ্বিক গণতন্ত্রের মান নিম্নগামী। দ্বিতীয় তাৎপর্য হলো, এখনো বহু পথ বাকি। এটা নিয়ে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য হলো দি ইকোনমিস্টের আলোচ্য প্রতিবেদনের খবর গরম থাকা অবস্থায়ই অর্থাৎ আজ ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হচ্ছে। গণতন্ত্রের মান নির্ণয়ে নির্বাচনের মান অন্যতম একটি বিবেচনা হিসেবে কাজ করে। তাই ঢাকা সিটির নির্বাচনের মাধ্যমে দি ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনের শুধু মর্যাদা রক্ষা নয়, অর্জিত মানকে আরো এগিয়ে নেওয়ার একটা সুযোগ সংশ্লিষ্ট সবার সামনে উপস্থিত। কাজটা শুধু নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিলে সব হয়ে যাবে না। এর জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বড় দুই রাজনৈতিক পক্ষ। কিন্তু সমস্যা হলো, গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য নির্বাচনে পরাজয়কে সহজভাবে গ্রহণ করার সংস্কৃতি থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে। কারণ পরাজিত প্রার্থী মনে করেন তিনি বোধ হয় সব হারালেন আর বিজয়ী প্রার্থী মনে করেন এখন থেকে সব কিছু তাঁর হয়ে গেল। পাঁচ বছরের জন্য তিনি রাজ্যের রাজা হয়ে গেলেন এবং ফ্রান্সের সম্রাট চতুর্দশ লুইসের মতো ভাবতে শুরু করেন ‘আই অ্যাম দ্য স্টেট’। সব বিধি-বিধান রক্ষা করে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী এবং দল জয়ী হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে যথার্থ নির্বাচন হলে সরকারি দলের জন্য জয়-পরাজয় যেটাই হোক, তাতেই তাদের লাভ আছে।
সংগত কারণেই দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি সরকারি দলের প্রতি বেশি থাকবে। সঠিক ভোট হলে মেয়র পদপ্রার্থীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচিতি এবং অভিজ্ঞতার বিবেচনায় আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী তুলনামূলক বিচারে অনেক এগিয়ে আছেন। দ্বিতীয়ত, মেয়র নির্বাচন দলীয়ভাবে এবং দলীয় প্রতীকে হচ্ছে বলে বড় দুই দলের নিকট ও দূর অতীতে ক্ষমতায় থাকাকালে সরকারের পারফরম্যান্সের বিষয়টা সচেতন ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগের ধারেকাছেও যে তারা নেই, সেটা বিএনপিও জানে।
তাই পারফরম্যান্সের তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণে না গিয়ে বিএনপির একমাত্র কথা হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্র উদ্ধারই তাদের একমাত্র কাজ। কিন্তু দি ইকোনমিস্টের সদ্যঃপ্রকাশিত প্রতিবেদনের পর গণতন্ত্র উদ্ধারের কোরাস গেয়ে কাজ হবে বলে মনে হয় না। মানুষ দলের পারফরম্যান্স দেখতে চায়। আওয়ামী লীগের বড় নেগেটিভ দিক যথারীতি এ স্টাবলিশমেন্টবিরোধী সহজাত ফ্যাক্টর। তা ছাড়া নিকট অতীতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কিছু দুর্বৃত্তায়নমূলক ঘটনা কিছু মানুষকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে পারে। নির্বাচন যদি যথার্থ হয় এবং সেটা যাতে হয় তার জন্য যদি বিএনপি সঠিক ভূমিকা পালন করে, তাহলে তাতে হেরে গেলেও ভবিষ্যতে অনেক রাজনৈতিক সুবিধা তারা পাবে। দেশি-বিদেশি দৃশ্য-অদৃশ্য চাপ বৃদ্ধি পাবে, যাতে সরকারি দল বিরোধী দলের প্রতি আরো গণতান্ত্রিক আচরণ করে। একই সঙ্গে বর্তমানে তারা যে রকম রাজনৈতিক পতিত অবস্থানে আছে, সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানোর পথ খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। আর আগের মতো বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য যদি হয় ছলে-বলে-কৌশলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, জয় বা পরাজয় নয়। তাহলে সেটা বিএনপির জন্য বুমেরাং হবে, যা এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে এবং দি ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনেও তার প্রতিফলন ঘটেছে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সব নির্বাচনে এবং সামগ্রিক রাজনীতিতে বিএনপির ট্র্যাক রেকর্ড কোনো বিচারেই ইতিবাচক ছিল না। এতে বিএনপি যেমন রাজনৈতিকভাবে ক্রমেই পিছিয়ে পড়েছে, তেমনি তাদের নেগেটিভ ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের ফলে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বয়কট করে যে হিমালয়সম ভুল তারা করেছে, সেটা এখন মৃদু মৃদু স্বরে বিএনপি স্বীকার করতে শুরু করেছে।
২০১৫ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের দিন দুপুরের আগেই আচমকা নিজেদের প্রার্থীদের জোর করে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে বাধ্য করাটা যে সঠিক ছিল না, সেটাও এখন বিএনপির কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে, যখন তারা বলছে যা-ই হোক না কেন শেষ পর্যন্ত তারা এবার নির্বাচনে থাকবে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে বিএনপির সজ্জন ও সম্ভাবনাময় প্রার্থী মনজুর আলম দলের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে রাগে, দুঃখে ও বেদনার সঙ্গে ওই নির্বাচনের পরে ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি আর রাজনীতি করবেন না। বিগত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের দিন বিএনপির এক মাঝারি গোছের নেতা লাখ টাকার স্পাই রিস্ট ওয়াচ (যে ঘড়ির মাধ্যমে ভিডিও করাসহ টেলিফোন করা যায়) হাতে লাগিয়ে তাঁর কিছু অনুসারী যুবকের বুকে নৌকা মার্কার কাগজ লাগিয়ে, জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে একটি ভোটকেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপারে জোরপূর্বক সিল মারার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন। এতে বোঝা যায় সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার চেয়ে বিএনপি বেশি পরিশ্রম ও টাকা খরচ করেছে কিভাবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় সেই কাজে। এসব অপচেষ্টা বিএনপিকে সামনে নেওয়ার চেয়ে বরং ক্রমেই পেছনে ফেলে দিয়েছে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী তিনজন সদস্যের সংসদে যোগদান নিয়ে যেসব তেলেসমাতি কাণ্ড বিএনপি করেছে, তাতে বোঝা যায় বিএনপির নেতৃত্বের সংকট কত চরম বিপর্যস্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঐতিহাসিক লিগ্যাসির সূত্র ধরে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী একটা উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী ভোটব্যাংক হিসেবে স্থির থাকায় বিএনপি এখনো রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে টিকে আছে। এই সূত্রে এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ বিএনপির রয়েছে। ষড়যন্ত্র, অপচেষ্টা পরিত্যাগ করে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক পন্থায় চেষ্টা চালিয়ে দু-চারটি নির্বাচনে হেরে গেলেও তাতে একটি রাজনৈতিক দলের জন্য বড় ক্ষতিকর কিছু হয় না, বরং আপাত পরাজয়ের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতে জয়ী হওয়ার পথকে সুগম করা সম্ভব হয়। সুতরাং বিগত সময়ের শিক্ষা থেকে এবার ঢাকা সিটির নির্বাচনে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে বিএনপি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে, সেটাই প্রত্যাশিত। লেখার শুরুতে যেমনটা বলেছি, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ওপর বেশি নজর থাকবে। তুলনামূলক যোগ্যতা এবং নিজ দলীয় সরকারের পারফরম্যান্সের বিচারে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীরা জয়ী হওয়ার দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে আছেন। তাই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্রগুলোতে অতি উৎসাহী আওয়ামী লীগারদের অপকর্মে নির্বাচন যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, তার জন্য দলের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত হবে।
এত সময় যা বললাম এগুলো নীতি-আদর্শের কথা, নৈতিকতার কথা এবং জাতি ও রাষ্ট্রের মর্যাদার কথা। কিন্তু সুবচন আজ নির্বাসনে। আধুনিক যুগের রাজনৈতিক পণ্ডিত ম্যাকিয়াভেলি ‘দ্য প্রিন্স’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, দেশের স্বার্থে দুর্বৃত্তদের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। কারণ সহজাতভাবেই মানুষ অপরাধপ্রবণ এবং লাঠির ভয় না থাকলে কুপ্রবৃত্তির প্রভাবে তারা যা ইচ্ছা করে ফেলতে পারে। ঢাকা যেহেতু বাংলাদেশের রাজধানী, তাই এই সিটি নির্বাচনের দিকে দেশের মানুষের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং সম্প্রদায়েরও নজর থাকবে। সুতরাং গণতন্ত্র অগ্রায়ণের যে স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে আসছে, তার মর্যাদা রক্ষার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অত্যন্ত কঠোরভাবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে ধরেই নিতে হবে নির্দিষ্ট কোনো ওয়ার্ড বা কেন্দ্রে যেসব কাউন্সিলর পদপ্রার্থী বা মেয়র পদপ্রার্থীর প্রভাব-প্রতিপত্তি বেশি, সেখানে সেই প্রার্থীর সমর্থকরা বহুবিধ অপকর্মে লিপ্ত হতে পারে। তাই ওয়ার্ড ও কেন্দ্রভিত্তিক পরিস্থিতির মূল্যায়নপূর্বক নির্বাচন কমিশনকে প্রতিরোধমূলক শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। যেহেতু ১ ফেব্রুয়ারি শুধু ঢাকা সিটিতে নির্বাচন হচ্ছে, তাই যথেষ্টসংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করার সুযোগ নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে এটাও ধরে নিতে হবে কোনো কোনো রাজনৈতিক পক্ষ এবং তার সঙ্গে পতিত কিছু মিডিয়ার পক্ষ থেকে পরিকল্পিতভাবে চেষ্টা করা হবে, যাতে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। এ শ্রেণির মানুষের কাছে দেশের মর্যাদা কিছু নয়, তাদের সংকীর্ণ স্বার্থই বড়—যে কথা আজকের লেখার একেবারে প্রারম্ভে উল্লেখ করেছি। বিগত সময়ে এ রকম প্রচেষ্টা লক্ষ করা গেছে। নির্বাচন কমিশনের আইনি শক্তির কোনো ঘাটতি নেই। তারা যদি সঠিকভাবে সার্বিক পরিস্থিতির মূল্যায়নপূর্বক সব রকম দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়, তাহলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু এবং অর্থবহ হবে। যারা হেরে যাবে তারা মিথ্যাচার ও প্রপাগান্ডা চালাবে। কিন্তু শেষ বিচারে তাতে কিছু যাবে আসবে না। সেসব উদ্দেশ্যমূলক প্রপাগান্ডার যে মূল্য নেই, তা তো সম্প্রতি দি ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনেও প্রমাণিত হয়েছে। উপসংহারে বলতে চাই, বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতিতে জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ আগে থেকে করা বড় কঠিন কাজ। একজন খুনি, গণহত্যাকারী ও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী যখন ভোটে জয়ী হন তখন সত্যি ভোটের ওপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি তাকে ধরে রাখার জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু এবং অর্থবহ হওয়া একান্ত জরুরি। সংশ্লিষ্ট সবাই সেই ভূমিকা রাখবেন বলে প্রত্যাশা করি।
লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষণ
- আরও পড়ুন >> আইসিজের রায়ে কতটা বরফ গলবে?