ঢাকা সিটি নির্বাচন: রাত পোহালেই ইভিএমে ভোট

মত ও পথ রিপোর্ট

ডিএনসিসি-ডিএসসিসি
ফাইল ছবি

প্রায় ৩ সপ্তাহের উৎসবমুখর প্রচারণা শেষে এখন নীরব নির্বাচনী মাঠ। সম্মুখ লড়াইয়ের আগের থমথমে অবস্থার সঙ্গে তুলনা করা চলে একে। গত কিছুদিন ধরে রিকশা-অটোরিকশা চলতে চলতে মাইকে বাজিয়ে গেছে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে বন্দনা আর ভোট প্রার্থনা। চলতি পথে দেখা মিলেছে সদলবলে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের হল্লা কিংবা হাসিমুখ করমর্দন। সেসব এখন আর নেই। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী গতরাত ১২টা থেকে প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে। এবার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোটারদের রায় দেয়ার পালা। সেই প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে। আসছে রাত পোহালেই ভোট। ঢাকা সিটি নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সব কেন্দ্রে ভোট নেয়া হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।

ইভিএমে ভোট নিয়ে প্রথম থেকে আপত্তি জানিয়ে আসছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে রয়েছে তাদের প্রার্থীরা। ইভিএম ভোট কারচুপির আশঙ্কার জবাবে তাদের নির্বাচন কমিশন আশ্বস্ত করেছে, ভোট কারচুপির কোনো সুযোগ ইভিএমে নেই।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে তারা। সব কেন্দ্র ইভিএম ব্যবহার হবে বলে এ নির্বাচন ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইসি সম্প্রতি সংবাদিকদের জানায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার তাদের জন্য ‘এক অগ্নিপরীক্ষা’।

এই কমিশনের সময় কোনো সিটি নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হয়নি। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার দুটিসহ সারা দেশে মোট ছয়টি সংসদীয় আসনের সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হয়েছিল। এসব আসনে ভোটের হার ছিল গড়ে ৫১ দশমিক ৪১ শতাংশ। তবে সারা দেশে ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮০ শতাংশ।

নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত তাপস
নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত তাপস

এর আগে শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সময় ২০১২ সালে প্রথম কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোট পুরোপুরি ইভিএমে হয়েছিল। এর আগে-পরে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে আংশিকভাবে ইভিএম ব্যবহৃত হয়। গত পৌরসভা নির্বাচনে বেশিরভাগ সদর পৌরসভায় ভোট নেয়া হয় ইভিএমে।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এক সভায় বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে এই যন্ত্রটির ভবিষ্যৎ। এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধ হলে শুধু নির্বাচন নয়, ইভিএমের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।

প্রথমবারের মতো রাজধানীর দুই সিটির নির্বাচনে ইভিএমের ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটের মহড়া হয়েছে। মহড়ায় অংশ নেয়া ভোটাররা জানান, খুব সহজে ভোট দেয়া যায় ইভিএমে। এক নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে তাদের।

ঢাকা সিটি নির্বাচনে এবার ইভিএমের পাশাপাশি আলোচনায় ছিল জমজমাট প্রচারণা। অনেক দিন পর দেশের নির্বাচনী মাঠে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সাবেক সরকারি দল বিএনপির নেতাকর্মীদের পদচারণ দেখা গেছে সমানতালে। জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গেছে প্রচারণায়। দু-একটি ঘটনা ছাড়া বড় কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি বিশেষ করে দুই প্রধান দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে।

তবে দুই দলের মেয়র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বিরোধী পক্ষ ভোটের দিন বিশৃঙ্খলা ও হাঙ্গামার পাঁয়তারা করছে। কেন্দ্র দখল করতে রাজধানীতে জড়ো করা হচ্ছে সন্ত্রাসীদের।

এসব বক্তব্য এত দিনের উৎসবমুখর প্রচারণার মাঠে শেষ মুহূর্তে আতঙ্কা ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন
নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন।

ভোট নিয়ে প্রধান দুই দলের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে ইসি বলেছে, সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো রয়েছে।

নূরুল হুদা বলেন, যেকোন সময়ের চেয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। কোনো ক্রিমিনাল, সন্ত্রাসী, বোমাবাজি এখানে এলে পুলিশ নজরদারিতে রাখবে এবং ধরবে।

আতিকুল ইসলাম
আতিকুল

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৬৫ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মাঠে নেমেছে। এ ছাড়া ১০ প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ থাকবে। সব বাহিনী মিলে মোট ৫০ হাজারের মতো ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একযোগে সব কেন্দ্রে ভোট চলবে ইভিএমে।

গতকাল থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দিনের জন্য দায়িত্ব পালন করছে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। ইসি কর্মকর্তারা জানান, দুই সিটিতে মোট প্রিজাইডিং আফিসার থাকবে ২৪৬৮ জন, সহকারী প্রিজাইডিং থাকবে ১৪ হাজার ৪৩৪ জন, পোলিং আফিসার থাকবে ২৮ হাজার ৮৬৮ জন, এছাড়া কারিগরি সহায়তায় (সেনাবাহিনী) থাকবে ৪ হাজার ৯৩৬ জন। সব মিলে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা থাকবে ৫০ হাজার ৭০৬ জন।

সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন করে ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।

তাবিথ আউয়াল
তাবিথ আওয়াল

ইসি কর্মকর্তরা জানান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মোট সাধারণ ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৪টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। এই সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এখানে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ৩১৮টি ও ভোটকক্ষের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৪৬টি।

দক্ষিণ সিটিতে মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ১৫০টি, ভোটকক্ষ ৫৫৮৮টি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে