নির্বাচন কমিশনের কাছে বিএনপির যে ১০টি লিখিত অভিযোগ

মত ও পথ প্রতিবেদক

ইসির কাছে বিএনপির যে ১০টি লিখিত অভিযোগ

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসির) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে বিএনপি। এতে ১০টি অভিযোগ করা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রটি শনিবার বিকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জমা দিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার কাছে তিনি অভিযোগপত্রটি জমা দেন।

ইসির কাছে বিএনপি যে ১০টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, সেগুলো হল-

১. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোটপ্রদান করে সকালে গণমাধ্যমে ভোটারদের নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পূর্ণ পরিপন্থী। প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে দলীয় সন্ত্রাসীদের কেন্দ্র দখল, বিএনপি দলীয় এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে নিরুৎসাহিত করেছে।

২. নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ২৯-০১-২০২০ তারিখে ১৭.০০.০০০০.০৩৪,৩৭০১২.১৯৪৭ স্মারকের মাধ্যমে জারিকৃত পরিপত্রে উল্লেখ করেছে যে, কোনো ভোটারের আঙুলের ছাপ যদি ইভিএম গ্রহণ না করে বা ম্যাচিং না হয় সে ক্ষেত্রে এ সংশ্লিষ্ট ভোটকক্ষের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিজের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে ওই ভোটকক্ষের মোট ভোটের সর্বোচ্চ ১% ভোটারকে শনাক্ত করে (নিজে দায়ভার নিয়ে) ভোট প্রদানের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন।

প্রতিটি ভোটকক্ষের এই ১% ভোটারের অতিরিক্ত বায়োমেট্রিক নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সরবরাহকৃত একটি পিন নম্বর ছাড়া সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিজের বায়োমেট্রিক দিয়ে আর খুলতে পারবেন না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের ভোটকক্ষসমূহের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের এই ১%-এর অতিরিক্ত ভোটারের বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ সংক্রান্ত পিন নম্বর ইতিমধ্যেই ভোটকেন্দ্রসমূহে দিয়ে দিয়েছে। এর ফলে এখন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের আঙুলের ছাপে ভোটার উপস্থিত না হলেও সরকারের চাহিদা মোতাবেক ওই কেন্দ্রের ভোটকক্ষসমূহের মোট ভোটের যত সংখ্যক প্রয়োজন তত সংখ্যক ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন।

নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইভিএম’র মাধ্যমে ভোট জালিয়াতির পথ একটি দলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

৩. বিএনপির এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছে এবং যারা এই বাধা অতিক্রম করে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছে তাদেরও সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা ভয়-ভীতি ও হুমকি-ধমকি এবং মারধর করে বের করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং অফিসার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।

৪. প্রধান নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘এজেন্টদের টিকে থাকার সামর্থ্য থাকতে হবে। এজেন্টদের তিনি প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। এটা বলে তিনি সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের উসকিয়ে দিচ্ছেন।

৫. যে সব ভোটকেন্দ্রে শত বাধা উপেক্ষা করেও পোলিং এজেন্ট অবস্থান করেছিলেন দুপুর ১২টার মধ্যেই তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।

৬. সমগ্র ঢাকা শহরে সরকারি সন্ত্রাসী বাহিনীদের পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মহড়ার কারণে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ফলে ভোটারগণ নিরাপত্তাহীনতার কারণে ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাচনী মাঠে পাওয়া যায়নি।

৭. অনেক কেন্দ্রের ইভিএম-এ ধানের শীষের প্রতীক ছিল না। ফলে ভোটাররা ধানের শীষ প্রতীকে ভোট প্রদান করতে পারেননি। এ ছাড়া অনেক ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের আঙুলের ছাপ নিয়ে শনাক্তকরণের পর ভোট না দিতে দিয়েই ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। কিংবা ভোটারের সঙ্গে ভোটকক্ষে ঢুকে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করেছে। নির্বাচনী কর্মকর্তা, পুলিশ কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট কোনো বাধা হয়নি।

৮. অনেকস্থানে গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে, অনিয়মের ছবি তুলতে বাধা দেয়া হয়েছে, মোবাইল ও ক্যামেরায় তোলা অনিয়মের ছবি ডিলিট করে দেয়া হয়েছে এবং সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।

৯. নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা তাদের নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ ও দখলে রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। এই নির্দেশ মোতাবেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীরা ভোটকেন্দ্র ও ভোটকেন্দ্রের আশপাশে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে এবং যে সব ভোটার আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন না বলে মনে করেছে তাদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দিয়েছে।

১০. এ ছাড়াও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ও তাদের প্রধান নির্বাচনী এজেন্টগণ শত শত অনিয়মের অভিযোগ রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ে ও নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করলেও সে সব অনিয়ম প্রতিকারে রিটার্নিং অফিসার বা নির্বাচন কমিশন কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না। এতদসঙ্গে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের বিএনপি প্রার্থীদের কিছু কিছু অনিয়মের অভিযোগ সংযুক্ত করা হল। এমতাবস্থায়, এ সব অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্টগণকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিতে আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তগণকে দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও ব্যর্থতার জন্য অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে