প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া চীনের উহান থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশি পাইলটদের অন্য দেশ ঢুকতে দিচ্ছে না। তাই ভাড়া করা বিমানের মাধ্যমে চীন থেকে আরও ১৭১ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফিংয়ের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।
করোনাভাইরাস নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনা হয়নি। বৈঠকের পর স্পেশালি ২০-২৫ জন নিয়ে বসে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে- যেভাবেই হোক এটাকে (করোনাভাইরাস) আমাদের দেশে ঢোকা প্রতিরোধ করতে হবে। এছাড়া যারা চীনের উহান থেকে আসবে সবাইকে…উহান থেকে তো চায়না একেবারে ক্লোজ করে দিয়েছে। সুতরাং বের হতে পারবে না। তারপরও বলা হয়েছে যদি সন্দেহ হয় উহান থেকে আসছে, তাকে অবশ্যই ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। কারণ আমরা এটা নিয়ে তো রিস্ক নেব না।
তিনি বলেন, অলরেডি যে ৩১২ জন আসছে (চীনের উহান থেকে) তাদেরকে হজ ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। সেখানে খাওয়া-দাওয়া সবকিছু দেয়া হচ্ছে। ইনিশিয়ালি তারা বোধ হয় বুঝতে পারেনি তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। তারা ভাবছে ছেড়ে দেবে, বাড়িতে চলে যাবে। ইয়ং ছেলেরা প্রথমে জানতেও চাচ্ছিল, আমাদের কেন আটকে রাখা হয়েছে? তাদের বুঝানো হলো এটা তো হাইলি রিস্কি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজকে অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহও সেখানে ছিলেন, ওনারা যেটা বললেন এর আগের যে ভাইরাসগুলো ছিল সেগুলো এত দ্রুত ছড়ায়নি। এটা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইবোলা ও অন্যান্য ভাইরাসের তুলনায় এটার মৃত্যুহারও কম।
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, উহান থেকে যে ৩১২ জনকে নিয়ে আসছি তাদের অবশ্যই কোয়ারেন্টাইনে ১৪ দিন থাকতে হবে। ওই ৩১২ জনের মধ্যে ৮ জনের জ্বর ছিল তাদেরকে সিএমএইচ ও আরেকটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা আইসোলেটেড, তবে তাদের রক্ত পরীক্ষায় কোনো ভাইরাস পাওয়া যায়নি।
এখনও ১৭১ জন ছাত্রসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ চীনে রয়েছে জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তারা আসতে চাচ্ছে, এটা (নিয়ে আসার বিষয়টি) দেখতে বলা হয়েছে। আমাদের প্লেন পাঠাতে একটা অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের যে প্লেনটা গেছে, আসার পর এই পাইলটদের কোনো দেশ ঢুকতে দিচ্ছে না। সেজন্য আলোচনা হয়েছে যে, এক্ষেত্রে যদি ভাড়া করা কোন বিমান পাওয়া যায়, চীনের কোনো ভাড়া করা বিমান যদি আনা হয় সেটা, সেটাতে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্লেন পাঠানো যাচ্ছে না। আমাদের প্লেন পাঠালে যে ক্রুরা যাবে তাদের বাইরে ভিসা দেয় না। অলরেডি সিঙ্গাপুর না করে দিয়েছে, এই ক্রুরা আমাদের এখানে আসতে পারবে না।
চীন ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ডাবল চেকআপ করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশেষ করে ভায়া হয়ে যারা আসে তারা সেফটি নিয়েই আসে। কারণ ব্যাংকক ও হংকংয়ে তো খুবই স্ট্রিক। কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুর হয়ে যারা আসে তাদের তো একটা ন্যাচারাল প্রটেকশন হয়। একবার সেখানে স্ক্যানিং হয়। এজন্য আমরা প্রটেকশন পাই। তারপরও আমাদের এখানে ডাবল প্রটেকশন সিস্টেম আছে।
তিনি বলেন, মানুষকে এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বলা। এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে আমাদের এখানে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। আমরা খুব হাইলি প্রটেকশনে আছি। এগুলো বলতে বলা হয়েছে’ বলেন খন্দকার আনোয়ার।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুসহ বড় বড় প্রজেক্টে যারা আছেন তাদের মধ্যে যারা ১৮ জানুয়ারির পর চীন থেকে এসেছেন তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রেখে দিয়েছি। উহান বেইজ যেসব কর্মী রয়েছে আমরা তাদের না করে দিয়েছি, ক্লিয়ারেন্স না দিলে আসতে পারবে না।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়ার কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে চারটি ফ্লাইট। একটি কুনমিং থেকে আসে, দুটো আসে চায়না সাউদার্ন গুয়াংজু থেকে আর ইউএস-বাংলা চলে। আজকে বিমান সচিব বললেন, আমি সিডিউল দেখলাম ১০-১২ জন প্যাসেঞ্জার হচ্ছে। মনে হচ্ছে ওরাই বন্ধ করে দিবে।
১৭১ জনকে কবে নাগাদ আনা হবে- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বেইজিংয়ে বাংলাদেশের দূতাবাসকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তোমরা ওদের সঙ্গে যোগাযোগ কর। আমরা কী ফেসিলিটিস দেব সেটাও যাতে তাদের জানানো হয়।
তিনি বলেন, তবে চীন সরকার আক্রান্ত একজনকেও ছাড়বে না। ৩১৬ জন আসার কথা ছিল ওরা ৪ জনকে ছাড়েনি। যদিও তারা করফার্ম না, খুব জ্বর ছিল, তারা রেখে দিয়েছে। ১৭১ জনকে চীন ছাড়পত্র দিলেই তারা আসতে পারবে।
এদিকে চীনের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬১ জনে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোববার যারা মারা গেছেন তাদের ৫৬ জনই ভাইরাসটির উৎসস্থল হুবেই প্রদেশের। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮২৯ জন। মোট ১৭ হাজার ২০৫ জন এখন প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত।