আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন ও গণহত্যার তদন্ত শুরু করেছে। তবে এক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকার আইসিসিকে কোনো সহযোগিতা করছে না।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জ্যেষ্ঠ পাবলিক প্রসিকিউটর হাসিকো মোকোচোকো এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জ্যেষ্ঠ এই প্রসিকিউটর বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত অপরাধ তদন্ত শুরু করেছে আইসিসি। কিন্তু মিয়ানমার সরকার আইসিসিকে কোনো প্রকার সহযোগিতা করছে না। তবে আইসিসি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত দোষীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করবে।
ব্যক্তি পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে যুক্ত দোষীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে জানিয়ে হাসিকো মোকোচোকো বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। তবে এখনই তদন্তের স্বার্থে সবকিছু বলা যাচ্ছে না।
আইসিসিকে অপরাধ তদন্তে মিয়ানমারকে সহযোগিতা করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জ্যেষ্ঠ এই প্রসিকিউটর দেশটিকে অনুরোধ করেন।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
এই নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে গত বছর ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। গণহত্যার তদন্ত শুরু না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায় দেশটি।
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেসে গত ১০ থকে ১২ ডিসেম্বর মামলার শুনানি চলে। ১০ ডিসেম্বর গাম্বিয়ার প্রতিনিধি দল আদালতে গণহত্যার বিষয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে। শুনানিতে গাম্বিয়ার পক্ষে মামলার প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির বিচারমন্ত্রী আবুবাকার তাম্বাদু।
পরদিন ১১ ডিসেম্বর মিয়ানমারের নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি। তিনি তার দেশের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন আইসিজেতে। ১২ ডিসেম্বর মামলার শুনানি শেষ হয়। হেগ শহরে এই শুনানিতে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। ওই দলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তিনজন প্রতিনিধিও ছিলেন।
গত ২৩ জানুয়ারি এই মামলায় অন্তবর্তীকালীন আদেশ দিয়েছে আইসিজে। সেখানে মিয়ানমারকে চারটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেগুলো হলো: ১. গণহত্যা কনভেনশন-২ অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের হত্যা, শারীরিক বা মানসিক নিপীড়ন কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করা যাবে না; ২. গণহত্যা কিংবা গণহত্যার প্রচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র না করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ; ৩. মিয়ানমারকে অবশ্যই চার মাসের মধ্যে লিখিত জমা দিতে হবে যেন তারা সেখানে পরিস্থিতি উন্নয়নে কী ব্যবস্থা নিয়েছে। এরপর প্রতি ছয় মাসের মধ্যে আবার প্রতিবেদন দেবে; ৪. গাম্বিয়া এ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে তার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের কাছে আবেদন করতে পারবে।