দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। গত ডিসেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক লেনদেন করেছে ৪০ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। একক মাস হিসেবে এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড লেনদেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, মোবাইলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে বা অতিদ্রুত শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোসহ (রেমিট্যান্স প্রেরণ) বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন পছন্দের মাধ্যম। ফলে দিন দিন গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে মোট ১৬টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ে জড়িত। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত কোটি ৯৬ লাখ ৪৯ হাজার। যা নভেম্বরে ছিল সাত কোটি ৮৫ লাখ ৯৪ হাজার। অর্থাৎ এক মাসে গ্রাহক বেড়েছে ১০ লাখ ৫৫ হাজার।
কমেছে সক্রিয় গ্রাহকসংখ্যা
জানা গেছে, টানা তিন মাসে একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় গণ্য করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
এমএফএস তথ্য বলছে, আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন ও গ্রহক সংখ্যা বাড়লেও সেবায় সক্রিয় গ্রাহকসংখ্যা কমেছে। ডিসেম্বর শেষে এমএফএস সক্রিয় গ্রহণ এক মাসের ব্যবধানে দশমিক ৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৪৭ লাখ ৬৩ হাজার। যা আগের মাস নভেম্বরে ছিল তিন কোটি ৫০ লাখ ৯২ হাজার। আর আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৭১ হাজার ৬২০।
এমএফএস এ গত ডিসেম্বরে মোট ২২ কোটি ৭৪ লাখ ২২ হাজার ৯৩৮টি লেনদেনের মাধ্যমে ৪০ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা ৬৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৩১১ কোটি ২১ লাখ টাকা।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে টাকা জমা পড়েছে ১৪ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। যা আগের মাসের চেয়ে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। এ সময়ে উত্তোলন করেছে ১৩ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। যা জুনের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।
রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা
আলোচিত সময়ে এমএফএসে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ৯ হাজার ৮৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ প্রায় ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৩১২ কোটি টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৬০৫ কোটি টাকা। সরকারি পরিশোধ ৬৫ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৭৩৯ কোটি টাকা।
- ‘যোগান নেই অজুহাতে’ মাস্কের দাম ঠেকলো ১৭৫০ টাকায়
- খালেদার কারাবাস: ডিআরইউতে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে ঐক্যফ্রন্ট
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমএফএস লেনদেনের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন গ্রাহক তার অ্যাকাউন্টে দিনে পাঁচ বারে ৩০ হাজার টাকা ক্যাশ ইন বা জমা করতে পারবেন। আর মাসে ২৫ বারে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ক্যাশ ইন করা যায়। আগে প্রতিদিন দুই বারে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জমা করা যেত। আর মাসে ২০ বারে এক লাখ টাকা ক্যাশ ইন করতে পারতো গ্রহক।