জিয়া-খালেদা-এরশাদ বাংলাদেশের মাটির সন্তান নয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, এ পযর্ন্ত যতজন ক্ষমতায় এসেছে একজনও বাংলাদেশের মাটির সন্তান নয়। একমাত্র আমার বাবা এবং আমি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মাটির সন্তান।
ইতালি সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় রোমের একটি হোটেলে ইতালি আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, দলটির বর্তমান চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের মাটির সন্তান নয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের জন্ম বিহারে, এরশাদের জন্ম কুচবিহারে, খালেদা জিয়ার জন্ম শিলিগুড়িতে। একজনও এই মাটির সন্তান না।
তিনি বলেন, এই মাটির সন্তান— এ পযর্ন্ত যতজন ক্ষমতায় এসেছে আপনারা হিসেবে করে দেখবেন, একজনও বাংলাদেশের মাটির সন্তান না। একমাত্র আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আমি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মাটির সন্তান।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমাদের মাটির টান আছে এজন্য আমাদের একটা কর্তব্যবোধ আছে।
দেশকে উন্নত করতে হলে দেশকে জানতে হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটা জিনিস, দেশকে জানা। অনেকেই ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু এদেশ সম্পর্কে জানে না। কারণ যাদের জন্ম বাংলাদেশের মাটিতে হয়নি তারা জানবে কোথা থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নিজের আমলে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট দিকদর্শন থেকে যদি আমরা কাজ করি তাহলে অবশ্যই একটা দেশ উন্নত হওয়া সম্ভব।
৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তাদের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আসলে ৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা এভাবে চিন্তা করেনি। তাদের ক্ষমতাটা ছিল ভোগের বস্তু।
তিনি বলেন, আর আমরা মনে করি ক্ষমতা মানে কাজ করার সুযোগ, জনসেবা করার সুযোগ, আমরা জনগণের সেবক। সেবক হিসেবে কাজ করি। সেটা হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশের ব্যাপক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না, আমরা এগিয়ে যাব।
দেশের সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আর কেউ ঐ দাতা দাতা বলে আমাদের ভিক্ষে দিতে আসে না। উন্নয়ন সহযোগী বলে আরও কত উন্নয়ন করবো সে সহযোগিতা করতে আসে। কারণ কারও কাছে আমরা ভিক্ষে চাই না।
বিদেশে যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়, প্রবাসীদের সেভাবে নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের আচার-আচরণ, ব্যবহার সব কিছুতে যেন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।
প্রত্যেক উপজেলা থেকে আরও ১ হাজার করে লোক প্রবাসে পাঠাতে সরকার একটা উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
ডিজিটাল পাসপোর্টের পর এখন ই-পাসপোর্ট চালুর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন ই-পাসপোর্টের যুগ, আমরা ইতোমধ্যে ই-পাসপোর্ট দেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছি। যাতে কেউ আর ধোঁকায় না পড়ে। সে ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিয়েছি।
বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি যে, প্রবাসী কেউ যদি দেশে যায় বিমানবন্দরে মাঝে মধ্যে খুব হয়রানির শিকার হতে হয়। আসলে আমাদের দেশের কিছু মানুষের চরিত্রই খারাপ। যেই শুনে বাইরে থেকে আসবে তখন ভাবে একটু চাপ দিলে বোধহয় ডলার পাওয়া যাবে।
ঘুষ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একটা কথা মনে রাখবেন ঘুষ যে দেয় সেও যেমন অপরাধী আর যে নেয় সেও অপরাধী। যে নেয় শুধু সে অপরাধী নয়, যারা দেয় তারাও অপরাধী। এই দিয়ে দিয়ে অভ্যাসটা আপনারা খারাপ করলেন। আগামীতে আর করবেন না।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছি। কোথাও কোন অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গে যেন ধরা পড়ে। ধরা পড়া শুধু না, তথ্য সরাসরি আমার কাছে চলে আসে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেন, ইতালি আওয়ামী লীগ সভাপতি ইদ্রিস ফরাজি, প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন হোসনে আরা বেগম।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার।
এর আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টা) রোমের ফিয়ামিসিনো বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীগণ।
সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে ইতালিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব চ্যান্সারি ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
- ফিলিস্তিন নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রত্যাখ্যান
- ঢাবির বহিষ্কৃত ৬৩ শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ
দুপুরে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন পালাজো চিগিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কোন্তের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে দুই প্রধানমন্ত্রী এক সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজেও অংশ নেবেন।
বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালীন আবাসস্থল পার্কো দেই প্রিন্সিপি গ্র্যান্ড হোটেলে ব্যবসায়ী নেতারা সাক্ষাৎ করবেন তার সঙ্গে। এরপর রাতে ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি।
সফরের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দুপুরে ট্রেনে করে রোম থেকে মিলান যাবেন।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৪০মিনিটে আমিরাত এয়ারলাইন্সের ‘ইকে-২০৬’ ফ্লাইটে মিলান মেলপেনসা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন শেখ হাসিনা।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।