‘অপরাধীর দল নেই, তার পরিচয় কেবলই অপরাধী’

মত ও পথ প্রতিবেদক

সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন ও প্রভাবমুক্ত থেকে বিচারকার্য পরিচালনা করছে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে বিচার বিভাগ জনগণের মাঝে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। আমরা জনগণের মাঝে এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। অপরাধীর কোনো দল নেই। তার পরিচয় কেবলই অপরাধী এবং অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক না কেন তার বিচার হবে।’-বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত নারী আসনের গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকারের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশে বা সংসদে না থাকায় তার প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপিত হয়। সংসদীয় আইন অনুযায়ী কোনো কার্যক্রম টেবিলে উত্থাপিত হওয়ার পর সেই প্রশ্নোত্তর পর্ব বা কার্যক্রম বৈধতা পায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত পাঁচ বছরে বিচার বিভাগ দেশের বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র-সংক্রান্ত মামলা, সিলেট ও খুলনায় আলোচিত দুই শিশু সামিউল আলম রাজন ও রাকিব হত্যা মামলা, নারায়ণগঞ্জ জেলার বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলা এবং জাপানি নাগরিক কুর্নিও হোশি হত্যার মামলাসহ চাঞ্চল্যকর মামলার রায় ঘোষণা করেছে। তাছাড়া হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং জঙ্গিবাদ উসকে দেয়ার চক্রান্ত করা হয়েছিল। হলি আর্টিসান হামলায় সাতজন আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করে বিচার নিষ্পত্তির মাধ্যমে এ চক্রান্ত রুখে দেয়া সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের বিচার বিভাগ কর্তৃক ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলা, ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী হত্যা মামলা, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দিয়া খানম মিম ও আব্দুল করিম রাজীবের মামলা, গাইবান্ধার সংসদ সদস্য লিটন হত্যা মামলাসহ বহুল আলোচিত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দানে ২৪ জন আওয়ামী লীগ কর্মীকে হত্যা মামলা ও ২০০১ সালে সিপিবির সমাবেশে হত্যা মামালায় প্রদানের মাধ্যমে বিচার নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যা মামলার বিচারকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে এবং বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলাটি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ গঠন পর্যায়ে রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এসব হত্যাকাণ্ড শুধু আলোচিত ঘটনায় নয়। এসব হত্যাকাণ্ড মানুষের সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের নামান্তর। কিন্তু আমরা বিচার বিভাগের মাধ্যমে দ্রুততার মাধ্যমে এসব মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আসামিরা যাতে সাজা পায় এবং নিরপরাধরা নির্যাতনের শিকার না হয়, সে বিষয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সজাগ রয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীকে চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমরা বিচার বিভাগের কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৬ লাখ ৪০ হাজার ৬৩৯ (২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত)। যার বিপরীতে কর্মরত বিচারকের সংখ্যা অপ্রতুল। ইতোমধ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৬ জন ও হাইকোর্ট বিভাগে ৩৭ জন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অধস্তন আদালতে ৭৬৮ জন সহকারী জজ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ১৩ তম বিজেএস (বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস) পরীক্ষার মাধ্যমে ১০০ জন সহকারী জজ নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ১৪ তম বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে আরও ১০০ জন নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৮৬টি পদ সৃজনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বিচারাধীন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজলাস স্বল্পতা দূর করতে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা ব্যবহার করে বিচার কাজে গতিশীলতা আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অধস্তন আদালতের জন্য ৪২টি জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭টি জেলায় সম্পূর্ণ ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এবং ১৪টি জেলায় ভবন নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এজলাস সংকট দূর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সম্প্রসারণ ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ নতুন ১২ তলা নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আদালতে মামলার বিচার নিষ্পত্তির পাশাপাশি নতুন মামলা দায়েরের হার কমাতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। এই পদ্ধতিকে ফলপ্রসূ করতে সারা দেশে জেলা জজ আদালতে একজন করে সরকারি সিনিয়র সহকারী জজ পর্যায়ের লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে