করোনাভাইরাস: খাদ্য-পানি সংকটে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

ডেস্ক রিপোর্ট

ইচাং শহর
ইচাং শহর

প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীন থেকে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন আরও ১৭২ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। এই ভাইরাসের কারণে সেখানে অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটাতে কাটাতে ঘরে খাবার, বিশুদ্ধ পানি সংকটে পড়েছেন তারা। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের কাছেই ইচাং শহরে অবস্থান করছেন তারা। উহান শহরেই সর্বপ্রথম করোনাভাইরাস দেখা দেয়।

চীনের মূল ভূখণ্ড ও এর বাইরে এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯২ জন। মঙ্গলবার চীনে নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন আরও ৩ হাজার ৮৮৭ জন। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত চীনে প্রতিষেধকবিহীন এই ভাইরাসে ২৪ হাজার ৩২৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

universel cardiac hospital

ইচাং প্রদেশে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা বলেন, এভাবে অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকতে থাকতে খাদ্য সংকট দেখা দিলেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ খাবার বা পানি সরবরাহ করেনি।

ইচাংয়ের চায়না থ্রি গর্জেস ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী দ্বীপায়ন রায় গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা এখানে মানবেতর জীবনযাপন করছি। ঘুমাতে পারি না। খাওয়া নেই, খাবার পানি নেই।

তিনি জানান, ইচাং শহর উহানের খুব কাছাকাছি অবস্থিত। ফলে এখানেও সবকিছু অবরুদ্ধ হয়ে আছে। এখানে ১৭২ জন বাংলাদেশি রয়েছি। খাদ্য ও পানি সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা ট্যাপের পানি ফুটিয়ে পান করছি। এমন বন্দি অবস্থায় বেশিদিন থাকলে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাব।

দ্বীপায়ন বলেন, খাবারের অভাব যে কত বড় কষ্ট তা বুঝতে পারছি। পানি ফুটিয়ে খাওয়া যায়, কিন্তু খাবার না থাকলে তো আর রান্না করা যায় না।

তিনি বলেন, আমাদের ডর্মেটরি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। আমরা বাইরে যেতে পারি না এবং কেউ ভেতরেও আসতে পারে না। ইউনিভার্সিটি খাবার দিতে চেয়েছে, কিন্তু সেই ৩ দিন আগে খাবার অর্ডার করেছিলাম, এখন পর্যন্ত পাইনি। এ অবস্থায় আমরা এখানে কতদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকব, জানি না। আমাদের ট্রেন স্টেশন, বিমানবন্দর বন্ধ।

তিনি আরও বলেন, সরকারের সাহায্য ছাড়া আমরা এখান থেকে বের হতে পারব না।

তাদের দেশে ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ জানান এই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।

দ্বীপায়ন বলেন, আমাদের এখানে কোনো বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি, কিন্তু ইউনিভার্সিটিতে বেশ কয়েকজন আক্রান্ত। বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকটে অচিরেই অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমরা সবাই দেশে ফিরতে চাই। এখানে বদ্ধ পরিবেশ, চারদিকে মৃত্যুর হাহাকার। প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙে অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে। প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।

তিনি বলেন, আমরা জানি, দেশে ফিরলে ১৪ দিন আশকোনাতে থাকতে হবে। সেখানে থাকতেও আমরা প্রস্তুত। শুধু আমাদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করুন।

উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চীনের উহান থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে সর্বমোট ৩১২ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ২৯৭ জন, এক বছরের বেশি বয়সী ১২ জন ও এক বছরের নিচে তিনজন রয়েছে।

তাদের মধ্যে ৮ জনের শরীরে জ্বর ছিল। তাই তাদের কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাদের নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। বাকিদের রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারান্টাইন অবস্থায় রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি থাকাদেরও আশকোনা ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে