ভারতের নিরাপত্তারক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। অবিচ্ছিন্ন সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত হতে যাচ্ছে ভারতের তিন বাহিনী।
দেশটির চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল বিপিন রাওয়াতের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, এখন থেকে ভারতের স্থল, নৌ এবং বিমান বাহিনীর আলাদা আলাদা কমান্ড নয়, ‘সংযুক্ত কমান্ড’পদ্ধতিতে কাজ করবে।
যে কোনো অভিযানের জন্য তিন বাহিনীকে সার্বক্ষণিত প্রস্তুত রাখতে এ সংযুক্ত কমান্ডের বিষয়টি আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থলবাহিনীর প্রধান পদ থেকে সদ্য অবসর নেয়ার ভারেতর প্রথম সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়ত বলেছেন, দেশের সশস্ত্র বাহিনীতে বড় একটি পরিবর্তন আসছে। আমরা স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে একটি অবিচ্ছিন্ন সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত করতে যাচ্ছি। এ জন্য নতুন ‘মিলিটারি কমান্ড’তৈরি হতে চলেছে। তাদের মধ্যে তিন বাহিনীর সৈনিকরা থাকবেন। এভাবে সবরকমের যুদ্ধক্ষমতা, পরিবহন ব্যবস্থা এবং লোকবলকে এক ছাতার নিচে আনা হবে।
দেশটির সমর বিশারদ অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তা কর্নেল সৌমিত্র রায় বলেছেন, বিষয়টি নতুন কিছু নয়। প্রাচীন পদ্ধতিতে ফিরে যাচ্ছি আমরা।
বিষয়টির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ভারতের সব প্রদেশেই সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমানবাহিনী আলাদা আলাদা কমান্ডে চলছে। যে কারণে কোনো অভিযান চালাতে বা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে গেলে সমন্বয় করতে সময় ও মেধার ব্যয়। তাই তিন বাহিনীর বিভিন্ন রকম সক্ষমতাকে প্রয়োজন অনুসারে এক কমান্ডে আনার কাজ শুরু হয়েছে।
একইরকম বক্তব্য দিয়ে বিএসএফের অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি সমীর মিত্র বলেন, দেশের ক্রান্তিকালে বা যে কোনও মুহূর্তে এক সিদ্ধান্তে উপনিত হতে সংযুক্ত কমান্ড খুবই জরুরি। কিন্তু তিন বাহিনীর কর্মকাণ্ড সব আলাদা আলাদা হওয়ায় এতে অসুবিধায় পড়তে হয়। তাই বাহিনীর কাঠামোয় এই বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
তবে এমন পরিবর্তন বললেই হয়ে যায় না, বিশেষকরে ভারতের মতো বিশাল একটি দেশে।
সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সৌমিত্র রায় বলেন, কাগজে-কলমে লিখে দিলাম আর ইন্টিগ্রেটেড থিয়েটার কম্যান্ড তৈরি হয়ে গেল, বিষয়টা এমন নয়। একেক স্থানের প্রয়োজনীয়তা, সক্ষমতা ও পরিস্থিতি একেক রকম। এসব প্রয়োজনীয়তাগুলো বুঝে চিহ্নিত করে নিয়ে তিন বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটকে একে একে বিভিন্ন কমান্ড হেড কোয়ার্টারে পাঠাতে হবে।
এজন্য স্থান ও কালভেদে নানা রকমের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে। এছাড়া তিন বাহিনীকে এক ছাতার তলায় আনা সম্ভব নয় বলে জানান বিএসএফের এই অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি।
এদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াত ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অভিন্ন বাহিনী হিসেবে কাজ করার প্রক্রিয়াগুলো সেনাদের মাঝে তুলতে কয়েকটি পরীক্ষামূলক আলোচনাও ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে।
- জিয়া-খালেদা-এরশাদ বাংলাদেশের মাটির সন্তান নয় : শেখ হাসিনা
- বঙ্গবন্ধু হত্যার মাস্টারমাইন্ডদের বিচারের আওতায় আনার দাবি
ভারতীয় সেনা সূত্রের খবর, তিন বাহিনীকে সংযুক্ত কমান্ডে আনতে তিন বছরের মতো সময় লাগবে।
প্রসঙ্গত ভারতের স্থলসেনা ও বিমানবাহিনীতে প্রদেশভিত্তিক বেশ কয়েকটি কমান্ডে ভাগ রয়েছে। পাকিস্তান সীমান্তে ওয়েস্টার্ন কমান্ড এবং সাউথ-ওয়েস্টার্ন কমান্ড, উত্তরে অর্থাৎ তিব্বত ও নেপাল সীমান্তে নর্দার্ন কমান্ড, পূর্বে অর্থাৎ চীন, ভুটান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার সীমান্তে ইস্টার্ন কমান্ড, দক্ষিণ ভারতের জন্য সাদার্ন কমান্ডে ভাগ রয়েছে।