রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সাইবার অপরাধ রোধে অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজস্ব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশের বিপুল সংখ্যক মেধাবি ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে বিশ্বমানের সফটওয়্যার ও সলিউশন্স উদ্ভাবনের কাজকে এগিয়ে নিতে হবে। একইসঙ্গে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ পণ্য ও সফটওয়্যারের প্রচারের জন্যও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়ার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) আয়োজিত ‘বেসিস সফটএক্সপো ২০২০’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ওই অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর প্রমুখ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে নতুন নতুন সফটওয়্যারের উদ্ভাবন ও এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যেমন মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে এবং ঘরে বসেই বিভিন্ন সেবা পাচ্ছে তেমনি এর অপব্যবহারও মানুষকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
তিনি বলেন, হ্যাকিং ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতিসহ বিভিন্ন সাইবার ক্রাইম এ খাতের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজস্ব প্রযুক্তি উদ্ভাবনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়া উদ্ভাবিত প্রযুক্তির উন্নয়ন, সংরক্ষণ এবং অপব্যবহার রোধেও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
রাষ্টপতি বলেন, সাইবার ক্রাইম এখন বিশ্বব্যাপী আলোচিত ইস্যু। তাই আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে সকলকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সমস্যার সমাধান আমাদেরই করতে হবে। এজন্য স্থানীয় বা বিদ্যমান সমস্যা ও প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখেই আমাদের ভবিষ্যত নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের মেধাবী তরুণদের কর্মসংস্থানসহ সরকারি ছোটো-বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে যাতে স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রাধিকার পায় সে ব্যাপারেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের স্থানীয় সফটওয়্যার কম্পানিগুলোকে আত্মনির্ভরশীল করতে দাতা সংস্থাগুলোর সহায়তায় যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে অথবা আগামীতে সেসব প্রকল্পে স্থানীয় কম্পানিগুলোকে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। সেইসাথে সরকারের উদ্যোগের সাথে বেসরকারি খাতে সম্পৃক্ততা ও অংশীদারিত্ব বাড়াতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) জোরদার করতে হবে।
সফটওয়ার ও ডিজিটাল ডিভাইসের ক্ষেত্রে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ পণ্য ও সফটওয়্যারের প্রচারের জন্যও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, এজন্য নতুন নতুন উদ্ভাবনসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোও গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।
ট্রান্সফর্মিং লাইফ থ্রু ইনোভেশন শ্লেগানে আইসিসিবিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতভিত্তিক সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ১৬ তম বেসিস সফটএক্সপো চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, দেশে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়ছে আর চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দড়্গ হতে হবে। বর্তমানে দেশের ৯৬% পরিবারে মোবাইল ব্যবহার করছে। বাঙালীরা মেধাবী, বিশ্বের দরবারে বাঙালীরা তাদের মেধার পরিচয় রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, সফটওয়্যার রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে। আইটিতে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি হলে তা দিয়ে দেশের বাইরে জনশক্তি রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন সম্ভব। আমাদের ভৌগলিক সুবিধা এবং তরুণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আউটসোর্সিংয়েও বাংলাদেশ আরও ভালো করতে পারবে।
- করোনাভাইরাস: চীনের আকাশে বাতাসে বাঁচার আকুতি
- ব্যাংকে সরকারের দেনা ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা : অর্থমন্ত্রী
বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, দেশের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে বিদেশে অনেক বড়ো বড়ো প্রকল্পে নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে। সেজন্য দেশের সকল কাজ বিদেশিদের দিয়ে করা গেলেও তা স্থানীয় কম্পানিদের দিয়েই বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হবে। এজন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
আয়োজকরা জানান, এবারের বেসিস সফটএক্সপোতে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের জন্যে থাকছে বি-টু-বি ম্যাচমেকিং সেশন, যার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা নিজেদের খুব সহজেই ব্যবসার প্রসার করতে পারবেন। এ বছর সুইডেন, জাপান, নেদারল্যান্ডস থেকে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বিটুবি ম্যাচমেকিং সেশনে অংশ নেবে।
পাশাপাশি অন্য খাত থেকে বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সফলভাবে বিটুবি সেশন সমপন্ন করা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ‘বেসিস টপ টেন ডিজিটাল-রেডি কমপানিকে সম্মাননা প্রদান করা হবে।
২০০০-এরও বেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আইসিটি ক্যারিয়ার ক্যামপ। রয়েছে ৪৫টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ইনোভেটিভ প্রজেক্ট শো-কেসিং, যাদের মধ্যে প্রথম তিনটি ইনোভেটিভ প্রজেক্টকে পুরষ্কৃত করা হবে। থাকছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আউটসোর্সিং কনফারেন্স। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে সিএক্সও লিডারশিপ মিট। পাশাপাশি থাকছে মিউজিক্যাল কনসার্টও।