অমর একুশে গ্রন্থমেলা : জমে উঠেছে বইয়ের বিকিকিনি

মত ও পথ প্রতিবেদক

অমর একুশে গ্রন্থমেলা
ছবি : সংগৃহিত

সন্ধ্যার আলো মিলিয়ে আসতেই এ বছর আর দেখা যায় না ফুটপাতে কাপড় বিছিয়ে বই বিক্রি কিংবা গায়ে গায়ে লাগানো স্টল। এবার প্রবেশপথ যেমন রয়েছে হকারমুক্ত তেমনি নান্দনিক বিচিত্রতায় সাজানো প্রতিটি স্টলের সামনে প্রশস্ত জায়গা। মেলাঙ্গনের নতুন আর্কিটেকচার ডিজাইনের ফলে শনিবার ছুটির দিনে প্রচুর ভিড়েও গ্রন্থমেলায় ছিল স্বস্তির আবহ। আর তা বই অনুরাগীরাও বেশ উপভোগ করছেন।

এক যুগ ধরে মেলায় আসছেন হাসান ও সাবিহা দম্পতি। ছাত্রাবস্থায় দেখা তাদের সেই গ্রন্থমেলা আর এখনকার গ্রন্থমেলায় বিস্তর পার্থক্য দেখছেন তারা। গত কয়েক বছরের চেয়ে এবারের প্রশস্ত পরিধি আর নান্দনিক বিন্যাস তাদের সন্তোষ জুগিয়েছে।

universel cardiac hospital

হাসান বলেন, এত চমৎকার লাগছে পরিবেশটা যে একদম একঘেয়েমি নেই। একটু চা খেতে চাইলে লিটলম্যাগ চত্বরের পেছনে ফাঁকা। ঘাসের ওপর বসে স্বস্তি নিয়ে আড্ডা দিতে কিংবা চা খাওয়া যাচ্ছে। চাইলে লেকপাড়েও বসা যাচ্ছে।

সাবিহাও বেশ প্রশংসা করেছেন এবারের মেলাঙ্গনের বিন্যাসে। তিনি বলেন, কাঙ্ক্ষিত স্টল খুঁজে পেতে একদমই কষ্ট হচ্ছে না। বরং হাঁটতেই ভালো লাগছে। তাছাড়া ধুলা নেই এটা একটা ভালো দিক।

পুরো মেলা নান্দনিকভাবে সাজানোর দায়িত্ব ছিল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ক্রস ওয়াকের। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মারুফ বলেন, এবারে আমরা প্রথমবার বইমেলা সাজানোর কাজটা নিয়েছি। চেষ্টা করেছি নান্দনিক ও স্বস্তিদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে। প্রতিটা বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছি আমরা।

বাংলা একাডেমিও এবার বইপ্রেমীদের স্বস্তির দিকটিতে বিশেষ নজর দিয়েছিল। একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, বইপ্রেমীর স্বস্তির জন্য আমরা পরিধি বাড়িয়েছি। আগামীতেও বইমেলার পাঠকদের কীভাবে শান্তি দেয়া যায় সে চেষ্টা আমাদের থাকবে।

শিশুরা মেতেছিল শিশুপ্রহরে

এবারের গ্রন্থমেলার শিশুপ্রহরের দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবারও কোলাহল আর উচ্ছ্বাসে মেতেছিল শিশুরা। বই দেখা, বাছাই করা আর কেনার পর খেলেছেও অনেকে। ভাগাভাগি করেছে আনন্দ।

গতকালের শিশুপ্রহরের আনন্দ ঝাঁপি খুলতেই সকাল থেকে শিশুদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছিল মেলা প্রাঙ্গণ।

শিশুরা বাবা-মায়ের হাত ধরে বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে বই দেখেছে আর কিনছে।মায়ের আঙুল ছাড়ছিল না ছোট্ট মালিহা। পঙ্খিরাজ প্রকাশনী থেকে বই কেনার পর মালিহা জানাল, স্কুলের বইয়ের বাইরে গল্পের বই পড়তে ভীষণ ভালো লাগে তার।

মালিহা বলল, আমাদের বাসায় অনেক বই। আমার আরো বই লাগবে। কারণ আমি সবগুলো পড়ে ফেলেছি।

মালিহার মা স্কুলশিক্ষিকা। তিনি বলেন, শুধু নিজের সন্তানকেই না, স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও বই পড়তে উৎসাহিত করি। ছোটবেলা থেকে বইয়ের অভ্যাস থাকলে তারা ভাষার ব্যবহার অনেক সুন্দরভাবে করতে পারে। পরীক্ষার খাতায় লিখতেও পারে ভালো।

বরাবরের মতো এবারও মেলায় শিশুদের পছন্দের তালিকায় আছে ভূতের গল্প এবং রূপকথার বই। কার্টুনের বইও বরাবরের মতো জনপ্রিয় তালিকায় রয়েছে।

শিশুদের পাশাপাশি মেলায় এসেছে কিশোররাও। তবে তারা একটু বিপাকে আছে। বয়ঃসন্ধির এই সময়টায় কোনো বয়সের সঙ্গেই নিজেদের মেলাতে পারে না তারা। ফলে যারা একা এসেছে তাদের অনেকটা খাপছাড়া হাঁটতে দেখা গেছে। তবে দলবল নিয়ে যারা এসেছে তারা বেশ আড্ডা দিয়েছে, হইহুল্লোড় করেছে। খুঁজেছে পছন্দের বই।

উল্লেখ্য, প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত থাকে শিশুপ্রহর।

নতুন বই

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, শনিবার গ্রন্থমেলায় নতুন বই এসেছে ২০১টি। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে বাংলা একাডেমির সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ও ফকরুল আলম অনূদিত ‘বঙ্গবন্ধুর শিশুতোষ জীবনী গ্রন্থ ‘ব্যালাড অব আওয়ার হিরো বঙ্গবন্ধু’, শোভা প্রকাশ এনেছে জুলফিকার নিউটনের প্রবন্ধ ‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা ও রাজনীতি’, আগামী প্রকাশনী এনেছে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বেলাল চৌধুরীর ‘বত্রিশ নম্বর’, অনিন্দ্য থেকে এসেছে মোশতাক আহমেদের সায়েন্স ফিকশন ‘রিরি’, পুথিনিলয় এনেছে ‘বুক পকেটে রবীন্দ্রনাথ (২৫ খন্ড), চন্দ্রাবতী একাডেমি এনেছে মারুফুল ইসলামের ‘মানুষ মানুষ আয়না’, বাংলা প্রকাশ এনেছে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর ‘প্রকৃতি ও প্রেমের কবিতা’, শিশু গ্রন্থকুটির এনেছে জাহীদ রেজা নূরের ‘স্পেনের রূপকথা’, কথাপ্রকাশ এনেছে সুমন্ত আসলামের ‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন চা খেতে আসেন আমাদের বাসায়’, অনন্যা এনেছে শামসুর রাহমানের ‘শামসুর রাহমানের গল্প’, জ্ঞানকোষ প্রকাশনী এনেছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘আমার সাইন্টিস মামা’।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে