শ্রম অধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ

মত ও পথ প্রতিবেদক

পোশাক শ্রমিক
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের শ্রম অধিকার প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রশ্নের আনুষ্ঠানিক জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ।

মূলত শ্রম আইন ও ইপিজেড আইন, সংগঠন করতে শ্রমিকদের বাধা দেওয়া, দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ছাঁটাই ও পুলিশি হয়রানি এবং শ্রমমান পরিদর্শনে (ইন্সপেকশন) ধীরগতির বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে শ্রম সচিব কে এম আলী আজম বলেন, নভেম্বরে যখন আমরা জেনেভাতে আলোচনা করি, তখন আমাদেরকে ওইসব অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হয়। আমরা জানুয়ারির মধ্যেই তাদেরকে জবাব দিয়েছি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বিষয়গুলো নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের ইতালি, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান ও ব্রাজিলের শ্রমিক সংগঠনের পক্ষে আইএলওতে অভিযোগ করা হয়েছে এবং গত নভেম্বরে এটি নিয়ে জেনেভাতে আলোচনাও হয়।

বাংলাদেশ শ্রম আইন ও ইপিজেড আইন সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় অভিযোগ বিষয়ে শ্রম সচিব বলেন, ইপিজেডের ফ্যাক্টরি থেকে প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করা হয় এবং সেখানকার পরিবেশ আমরা নষ্ট হতে দেবো না। সেখানে ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন করার অনুমতি আছে।

ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকরা বাইরের শ্রমিকদের থেকে বেশি সুবিধা ভোগ করে এমন দাবি করে তিনি বলেন, বিদেশিরা বলে থাকে এক দেশে দুই আইন থাকতে পারে না, আবার তারাই ইপিজেড আইনের সংস্কারের কথা বলছেন। যদি তারা দুই আইনের বিষয়টি নাই মানেন, তবে তারা আইন অবসায়নের কথা না বলে সংস্কারের কথা কেন বলেন।

তিনি বলেন, তাদের সব দাবি মেনে নেওয়া কঠিন।

সংগঠন করতে শ্রমিকদের বাধা দেওয়া ও দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে পুলিশি হয়রানির বিষয়ে সচিব বলেন, গত বছর আশুলিয়াতে যখন শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছিল, তখন অনেক শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু পর্যায়ক্রমে প্রায় সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

শ্রমমান পরিদর্শনের (ইন্সপেকশন) বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আরও বেশি পরিমাণে ইন্সপেক্টর পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দেবো। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

তিনি আরও বলেন, নতুন কোনো পদ সৃজন করতে হলে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে, যা সময়সাপেক্ষ। তবে আমরা ইতোমধ্যে অনেকগুলো পদ সৃষ্টি করেছি এবং নিয়োগও দিয়েছি এবং আরও নিয়োগ দেওয়া হবে।

ইইউ ও শ্রম অধিকার

গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ ও ইইউ’র মধ্যে যৌথ কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, দেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতি শক্তিশালী করার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। এ বিষয়ে উভয়পক্ষ কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে ইইউর পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা নীতিমালা (ইবিএ) তৈরি হচ্ছে ২০২৩ সালের মধ্যে। বাংলাদেশের জন্য এই সুবিধা অব্যাহত রাখতে হলে শ্রম আইন, শ্রম নীতিমালা এবং ইপিজেড শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা ব্রাসেলসে শ্রম অধিকার ও মানবাধিকার উভয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি, কারণ ইইউতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধার বিষয়টি নির্ভর করবে ২০২২-এর মধ্যে উভয়পক্ষের দর কষাকষির ওপর।

যেহেতু এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ইইউ সংসদে, আমরা সেখানকার সংসদ সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে মন্ত্রীরাও এ বিষয়ে আলোচনা করছেন।

উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতালি সফরের সময়ে ইইউ বাজার সুবিধার বিষয়ে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছেন।

উল্লেখ্য, ইতালি ইইউ’র একটি প্রভাবশালী সদস্য।

তিনি বলেন, ইউরোপের দেশগুলোর অনেক বিষয় নিয়ে উদ্বেগ আছে এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমরা বলার চেষ্টা করছি তাদের উদ্বেগ দূর করার জন্য যতদূর সম্ভব আমরা কাজ করব।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে