ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ‘আমার দেখা নয়া চীন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমার দেখা নয়া চীন
ফাইল ছবি

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ১৯৫৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’। বইটি মেলা প্রাঙ্গণে আসতে না আসতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ফলে আগ্রহ নিয়ে অনেকে বইটি কিনতে এসে না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন।

অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বইটিতে বঙ্গবন্ধু কখনও পর্যটক, কখনও সমালোচক আবার কখনও লেখক হিসেবে ভালো কিছুর প্রশংসা করেছেন। এছাড়া সদ্যস্বাধীন হওয়া নতুন চীনের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার কথাও বইটিতে উঠে এসেছে।

মেলার প্রথমদিন থেকেই পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বইটি। ফলে বিক্রিও হয় বেশ। মেলার প্রথম ১০ দিনেই প্রায় ২০ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) আর কিছু কপি নিয়ে আসা হয়। তবে মেলার গেট খোলার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই সব বই বিক্রি হয়ে যায়।

এ বিষয়ে বিকেল ৪টার দিকে মেলা প্রাঙ্গণে বাংলা একাডেমির একটি স্টলের ইনচার্জ জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটির বেশ চাহিদা রয়েছে। আজ আমরা নতুন করে ২০টি বই নিয়ে এসেছিলাম। সবগুলো বিক্রি হয়ে গেছে।

এই স্টলটির এক কর্মী বলেন, মেলার শুরু থেকেই ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইয়ের প্রতি পাঠকদের অন্যরকম আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২০ হাজার বই বিক্রি হয়েছে। আমি যতটুকু জানি এবার বইটি ১ লাখ ২০ হাজার কপি বিক্রির একটি টার্গেট নেয়া হয়েছে।

এদিকে গত ২ ফেব্রুয়ারি ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটির মোড়ক উন্মোচনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটি ১৯৫৪ সালে রচিত। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে থাকতেন তখন আমার মা (শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) তাকে কারাগারে খাতা কিনে দিতেন। সেই খাতার লেখা থেকেই ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটি প্রকাশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বইয়ের মলাটে ‘আমার দেখা নয়া চীন’ লেখাটি লম্বালম্বিভাবে লেখা হয়েছে, চীনের অক্ষরের মতো করে। এখানে যে মনোগ্রাম ব্যবহার করা হয়েছে, তিনি (বঙ্গবন্ধু) যে শান্তি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন সেই শান্তি সম্মেলনে মনোগ্রামটা একটা শান্তির পায়রা। এটা একটা শান্তি সম্মেলনের ছবি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখনই চীনে গিয়েছি তখনই সেই শান্তি সম্মেলনের কিছু ছবি খুঁজেছি। কিন্তু সেই ছবি আমি পাইনি। চীনের একজন প্রেসিডেন্ট এক সময় বাংলাদেশে এসেছিলেন, তিনি আমাকে একটা অ্যালবাম উপহার দিয়েছিলেন। সেখানে ১৯৫৭ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশের পার্লামেন্টের নেতৃত্ব দিয়ে চীন ভ্রমণ করেছিলেন, সেটার কিছু ছবি পেয়েছিলাম। সম্মেলনের সেই ছবিগুলো যখন আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি, তখন তারেক সুজাত সেই ’৫২ সালের সম্মেলনের ছবি, মনোগ্রামসহ অনেক তথ্য এনে দিল আমাকে। সে জন্য আমি তারেক সুজাতকে ধন্যবাদ জানাই। নয়া চীন এ জন্য বলা হতো যে, তখন সদ্যস্বাধীন একটি দেশ নামে পরিচিত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে কারাগারে বন্দি হয়েছিলেন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলন, ভুখা মানুষের খাদ্যের দাবিতে যখন মিছিল করছিলেন তখন তিনি আবার গ্রেফতার হন। ১৯৫২ সালের ২৮ জানুয়ারি ফরিদপুর জেল থেকে তিনি মুক্তি পান। ’৫২ সালে চীনে শান্তি সম্মেলন হয়েছিল। পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধি দল চীনের শান্তি সম্মেলনে যায়। সেখানে পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আতাউর রহমান খানসহ বাংলাদেশের কয়েকজন আমন্ত্রিত ছিলেন।

তিনি বলেন, তার (বঙ্গবন্ধু) চীনের সেই শান্তি সম্মেলনে যাওয়ার পথে যেভাবে যেতে হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে রেঙ্গুন, রেঙ্গুন থেকে হংকং, হংকং থেকে পিকিং এবং সেই সব বিস্তারিত বিবরণ তিনি এই বইয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি এই বইয়ে লেখা আছে তিনি প্রথম সেই শান্তি সম্মেলনে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এই বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যাওয়া এবং সেখানে বক্তৃতা দেয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেখানেই দিয়েছিলেন। সাধারণত কেউ যখন কোনো সম্মেলনে যান তখন সে শুধু সেই সম্মেলন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু এই বইটিতে আমরা দেখেছি, তিনি যেমন শান্তি সম্মেলনে যোগ দিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের অনুষ্ঠানের বিবরণ দিয়েছেন। সেই সাথে চীনের মানুষের অবস্থাটা কী; তাদের আর্থসামাজিক অবস্থা, তাদের ভেতর কী পরিবর্তন আসল, সেখানকার কৃষক-শ্রমিক এমনকি ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রী ছেলে-মেয়েরাও, সবার কথা তিনি লেখনীতে বলেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর দেখার ভেতরে যেটা আমার মনে হয়েছে যে, তিনি শুধু একজন পর্যটক কিংবা তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন। আবার সমালোচক হিসেবে তাকে পাই, পর্যটক হিসেবে তাকে পাই। আবার যেখানে ভালো দেখেছেন সেখানে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তার দেখা এবং লেখনীর ভেতর দিয়ে যে জিনিসটি আমার সামনে এসেছে, তিনি এ লেখার ভেতর নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলেছেন। নারীর ক্ষমতায়ন যে কতটা প্রয়োজন সেখানে তিনি তা উল্লেখ করেছেন।

তিনি যে রিকশায় ভ্রমণ করেছেন সেই রিকশাওয়ালার চরিত্রটাও চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। পাকিস্তানি শাসকদের কাছে প্রায় আড়াই বছর বন্দি থাকার পর তিনি যখন সেখানে যান এবং সবকিছু যখন দেখেন। পাকিস্তানে থাকা অবস্থায় তার ওপর নানা অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে। তিনি যখন আবার নয়া চীনে যান তাদের অত্যাচার-নির্যাতনের কথা কিছুই বলেননি। এখানে বিশেষ একটা দিক আমার নজরে আসে সেটা হলো- একজন রাজনৈতিক নেতা যেভাবে অত্যাচারিত হয়েছেন, পাকিস্তানি শাসকরা যে তাকে এত অত্যাচার করেছে, এত নির্যাতন করেছে সে ধরনের কোনো কথা কিন্তু তিনি বলেননি। তিনি সেখানে বলেছেন, আমাদের দেশের ভেতরে যা হচ্ছে সেটা তো হচ্ছে, সে ব্যাপারে আমি বিদেশে এসে কোনো বদনাম করতে পারি না।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে