তফসিল ঘোষণা করা না হলেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের হিড়িক পড়েছে। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ফরম সংগ্রহ করছেন।
কোনোকালে আলোচনায় ছিলেন না বা কেউ কোনোদিন নামও শোনেননি এমন অজ্ঞাত-অখ্যাতরাও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন। সকাল-বিকাল দল বদল করেন এমন ব্যক্তিও নিয়েছেন দলীয় মনোনয়ন ফরম।
আর এ নিয়ে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে কোনো উত্তাপ নেই। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দিলেও দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেনি দলটি।
জানা গেছে, ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরুর পর ৩ দিনে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে ১৩ জন এবং কাউন্সিলর পদে ৩৩২ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। দলীয় সভানেত্রীর ধানমণ্ডির কার্যালয়ে দলে দলে গিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী তথা মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ফরম সংগ্রহ করছেন। আর সেই ছবি ক্ষণে ক্ষণে ফেসবুকে আপলোড দিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে এ পর্যন্ত মেয়র পদে যে ক’জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম বিএসসির বড় ছেলে ও সানোয়ারা গ্রুপের এমডি মুজিবুর রহমান, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুচ, চউকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, জাসদের প্রয়াত এমপি মাঈনুদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর ছেলে নগর আওয়ামী লীগের সদস্য হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, সংরক্ষিত আসনের সাবেক মহিলা কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরী ও প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম এবং ইনসান আলী।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক মেয়র এম. মনজুর আলমও অন্যজনকে দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। তিনি নিজেও আ.লীগের মনোনয়ন পেতে লবিং করছেন।
সূত্র জানায়, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু একজন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নেতা। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাও তিনি। তবে মেয়র পদে তিনি নির্বাচন করবেন এমনটি কখনোই শোনা যায়নি। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরীও মেয়র পদের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। কোন প্রেক্ষাপটে কিসের আশায় তিনি মনোনয়ন ফরম নিলেন তার কোনো উত্তর নেই।
ইনসান আলী নামের এক ব্যক্তিও আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তার দলীয় পদ-পদবি সম্পর্কে দলের কেউ বলতে পারছেন না। এছাড়া নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য যে ৩৩২ জন আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন এখানেও রয়েছেন অজ্ঞাত-অখ্যাত অনেকেই। ছাত্রলীগ-যুবলীগের ছোটখাটো পদে আছেন কিংবা কোনো পদে নেই এরকম অনেক ‘পাতি’ নেতাও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, একটি নির্দিষ্ট বয়স হলে যে কেউ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারেন সে অধিকার সংবিধান তাদের দিয়েছে। কিন্তু মেয়রের মতো একটি জায়গায় যিনি বা যারা মনোনয়ন ফরম নিচ্ছেন তাদের বিবেচনা করা উচিত আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের মনোনয়ন পাওয়ার মতো কন্ট্রিবিউশন, ডেডিকেশন, রাজনৈতিক কমিটমেন্ট বা যোগ্যতা তাদের আছে বা হয়েছে কিনা। এটি যদি বিবেচনা করে মনোনয়ন ফরম নেন তবে দলের মর্যাদাও থাকে। যিনি মনোনয়ন ফরম নিচ্ছেন তার মর্যাদাও রক্ষা হয়।
একাধিক রাজনৈতিক নেতা গণহারে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা ও রাজনীতির জন্য অশুভ সংকেত বলে মন্তব্য করেন। তারা বলেন, জনপ্রতিনিধি হওয়ার বিষয়টি কোনো ছেলেখেলা নয়; রাতারাতি নেতা বা জনপ্রতিনিধি হওয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। রাজনীতিতে সুস্থ প্রতিযোগিতা ও পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দায়িত্ব নিতে হবে দলের নীতিনির্ধারক ও শীর্ষ নেতাদের।
অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে তাদের দল অংশ নেবে বলে ইঙ্গিত দেন চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত মঙ্গলবারের সমাবেশে। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের কোনো প্রক্রিয়া শুরু করেনি দলটি।
নগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান এ প্রসঙ্গে বলেন, ভোটের ওপর তাদের আস্থা নেই। এরপরও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আ.লীগ যেভাবে দলে দলে ঢাকায় গিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছে সেভাবে বিএনপি করবে না। চট্টগ্রাম থেকেই যাতে আগ্রহী দলীয় প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারেন সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাবনা পাঠাব।