আজ পহেলা ফাগুন। বাংলা মাসের হিসাবে ফাল্গুন ও চৈত্র এই দুই মাস ঋতুরাজ বসন্ত। মাসের প্রথম দিনেই এবারও বসন্তকে বরণ করে নেবে ঢাকাবাসী। রঙ বেরঙের পোশাকের বাহারি ফুলেল উপস্থিতিতে সে এক অন্যরকম আমেজ দেখা দেবে। পোশাক ও মননে বসন্ত বরণের নয়ন জুড়ানো দৃশ্য দেখা যাবে রাজধানীতে। বাসন্তী কিংবা হলুদ রঙের শাড়ির সঙ্গে খোঁপায় গাঁদা ফুলের বন্ধনী অথবা মাথায় ফুলের টায়রা পরে ঘুরতে বেরোবে নারীরা। ঢাকার বুকে বাসন্তী সাজে তারা ঘুরে বেড়াবে চারুকলা আর টিএসসিতে।
এ বসন্ত শুধু শুধু উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না, আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তরঙিন স্মৃতির কথাও মনে করিয়ে দেয়। ১৯৫২ সালের ৮ ফাগুন বা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ারও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিণত হবে মানুষের বাসন্তী রঙের প্রাঙ্গণে। রমনা পার্ক, জাতীয় সংসদ, চন্দ্রিমা উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন, চারুকলার পেছনের সবুজ প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়াবে রাজধানীবাসী।
সকাল থেকে হলুদসহ বাহারি রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পড়ে ঢাকায় বেরোবে কিশোর-তরুণ-তরুণীরা। শিশুদের পোশাকেও দেখা যাবে নানা রঙের সমাহার। শিশু কিশোর থেকে শুরু করে সকলেই সাজবে নতুন সাঝে।
এবারও রাজধানীতে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদ। সকাল থেকে রাত অবধি চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় থাকবে যন্ত্রসঙ্গীত, বসন্ত কথন পর্ব, প্রীতি বন্ধনী, আবির বিনিময়, একক আবৃত্তি, দলীয় আবৃত্তি, একক সঙ্গীত, দলীয় সঙ্গীত, দলীয় নৃত্য। দেশের অগ্রগণ্য দল ও বরেণ্য শিল্পীরা অনুষ্ঠানমালায় অংশগ্রহণ করবেন।
বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে আমরা পালন করি ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। এ উৎসব এখন পরিণত হয়েছে বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবে।
বাংলায় বসন্ত উৎসব এখন প্রাণের উৎসবে পরিণত হলেও এর শুরুর একটা ঐতিহ্যময় ইতিহাস আছে, যা অনেকের অজানা। মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব।
তখন অবশ্য ঋতুর নাম এবং উৎসবের ধরনটা এখনকার মতো ছিল না। কিন্তু অন্য ঋতুর চেয়ে এই ঋতুকে পালন করা হতো আলাদাভাবে। তাই পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব কেবল উৎসবে মেতে ওঠার সময় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য, বাঙালিসত্তা।