ভারতের গুজরাটে ৬৮ ছাত্রীকে অন্তর্বাস খুলিয়ে হেনস্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতে ৬৮ ছাত্রীকে অন্তর্বাস খুলিয়ে হেনস্তা

ঋতুচক্র চলছে কি না, তা যাচাই করতে ভারতের গুজরাটের একটি কলেজের ৬৮ জন ছাত্রীর অন্তর্বাস খুলিয়ে পরীক্ষা করার অভিযোগ উঠছে। লজ্জাজনক এ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্তকারী দল গঠন করেছে দেশটির জাতীয় মহিলা কমিশন। তারা কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

গুজরাটের ভুজে শ্রী সহজানন্দ গার্লস ইনস্টিটিউট (এসএসজিআই) নামে ওই মহিলা কলেজটি পরিচালনা করেন স্বামীনারায়ণ মন্দিরের অনুগামীরা। এখানে স্নাতক স্তরে প্রায় ১৫০০ ছাত্রী পড়াশোনা করেন। তাদের মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা ৬৮ জন ছাত্রী থাকেন হোস্টেলে। অন্তর্বাস খুলিয়ে হেনস্তার অভিযোগ তুলেছেন এই ৬৮ ছাত্রী।

অভিযোগকারিণীরা জানান, হোস্টেলে তাদের অনেক নিয়ম মানতে হয়। যেমন ঋতুকালীন অবস্থায় রান্নাঘর বা মন্দিরের কাছাকাছি না যাওয়া, অন্য সহপাঠীদের না ছোঁয়া ইত্যাদি। ছাত্রীরা সেই সমস্ত নিয়ম মানছেন না বলে বুধবার তাদের ভর্ৎসনা করেন হোস্টেলের ওয়ার্ডেন অঞ্জলিবেন। তিনি ছাত্রীদের বিরুদ্ধে কলেজের অধ্যক্ষ রীতা রানিনগার কাছে নালিশও জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রীর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার ক্লাস চলাকালীন তাদের সবাইকে বাইরে বেরিয়ে আসতে বলেন অধ্যক্ষ। নিয়মভঙ্গের অভিযোগে প্রথমে তাদের ধমক দেয়া হয়। পরে যাদের ঋতুচক্র চলছে তাদের আলাদা করে দাঁড়ানোর নির্দেশও দেন অধ্যক্ষ। দুই ছাত্রী তাতে সরে দাঁড়ান। বাকিরা সত্যি বলছেন কি না, তা যাচাই করতে সবাইকে হোস্টেলের বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হয়।

অভিযোগ, সেখানে প্রত্যেকের অন্তর্বাস খুলে পরীক্ষা করেন কলেজের শিক্ষিকারা। হোস্টেলের ছাত্রীদের আরও অভিযোগ, ঋতুচক্র চলাকালীন তাদের প্রায়ই হেনস্থার শিকার হতে হয়। নানা ভাবে তাদের মনে করানো হয়, বিষয়টি ঘৃণ্য এবং অপবিত্র। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি বলে জানিয়েছে গুজরাট পুলিশ।

ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও ছাত্রীরা জানান, বিষয়টি কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য প্রবীণ পিন্ডোরিয়াকে জানালে তিনি ঘটনাটি চেপে যাওয়ার জন্য চাপ দেন। এমনকি পুলিশের কাছে গেলে ছাত্রীদের হোস্টেল ছাড়তে হবে বলে হুমকি দেন। কলেজে এসব কিছুই ঘটেনি- এমন বয়ান লেখা একটি চিঠিতে সই করতে বলা হয় ছাত্রীদের। এ বিষয়ে অবশ্য পিন্ডোরিয়ার কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। চুপ মেরে আছেন কলেজের অধ্যক্ষ রীতাদেবীও।

কলেজের পরিচালন সমিতির আর এক সদস্য পি এইচ হিরানি অবশ্য ঘটনাটির কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, নামমাত্র বেতনের বিনিময়ে এখানে পড়ার সুযোগ পান মেয়েরা। প্রতিষ্ঠান চত্বরে মন্দির থাকায় মেয়েদের কিছু ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলতে বলা হয়। তবে ছাত্রীদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা ঠিক নয়। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দর্শনা ঢোলকিয়া। যে বা যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র: আনন্দবাজার

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে