আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তার সরকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করে না। যেসব এলাকার লোকজন আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় না তাদের উন্নয়নও সমানভাবে করে। নৌকাকে উন্নয়নের প্রতীক আখ্যায়িত করে আগামী দিনে এই প্রতীকে ভোট দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩, বাগেরহাট-৪, বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী বাছাই করতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে গণতন্ত্র আছে। এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কেউ ভোট দিক না দিক, উন্নয়নের ছোঁয়াটা প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছাক সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা উন্নয়ন একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে। এমন নয় যে শুধু শহরভিত্তিক করে যাচ্ছি। কারণ এই দেশটা আমরা স্বাধীন করেছি, জাতির পিতা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তাই মানুষের কাছে স্বাধীনতার সুফল যাতে পৌঁছায় সেভাবে আমরা কাজ করছি। যার ফলাফল দেশের মানুষ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত এক দশকে আমরা বাংলাদেশের যে উন্নয়নটা করতে পেরেছি, তা অতীতে কোনো সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। আজকে বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত করতে পেরেছি, দরিদ্রতা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাআল্লাহ সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারবো।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। আর নির্বাচনে আমি জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, তারা বারবার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। দেশের জনগণের সেবা করার সক্ষমতা পেয়েছি। জনগণ যে তাদের সেবা করার দায়িত্বটা আমাদের দিয়েছে, আমরা সেটাই পালন করতে চাচ্ছি। আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো মাঠ পর্যায়ের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমরা যদি সঠিকভাবে আমাদের উন্নয়নের কথাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি তাহলে ভোটে কিন্তু আর অসুবিধা হওয়ার কথা না। জনগণের বিশ্বাস, আস্থা আমরা অর্জন করতে পেরেছি। দীর্ঘদিন একটানা সরকারে থেকেও জনগণের যে আস্থাটা ধরে রাখতে পেরেছি এটাও একটা বড় অর্জন।’ দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের গতি ও ধারাটা অব্যাহত রাখতে হলে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। নৌকা মার্কা ছাড়া এই উন্নয়ন হয় না। নৌকা মার্কা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, আর এই নৌকার মাধ্যমেই সব অর্জন। কাজেই আপনারা জনগণের কাছে যাবেই। জনগণের কাছে যেয়ে ভোটের কথা বলবেন। এখনো যেহেতু চট্টগ্রামের শিডিউল ঘোষণা হয়নি, কাজেই আমি নিশ্চিয় ভোট চাইতে পারি। সেই অধিকার আমার রয়েছে। আমি শুধু এইটুকু বলবো, আপনারা যদি আমাদের উন্নয়নের কথা জনগণের কাছে পৌঁছান নিশ্চিয় তারা ভোট দেবে। বিশেষ করে আমাদের মা-বোনেরা। কারণ নারী ক্ষমতায়নে ও উন্নয়নে আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি। আমরা সকল শ্রেণির উন্নয়ন করে যাচ্ছি। কোনো শ্রেণিকে বাদ দিচ্ছি না।
তিনি বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে আমার বাবা দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, তা পূরণ করতে হবে। এটাই হলো আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। সেখানেই আপনাদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। আপনারা নিঃস্বার্থভাবে দেশের সেবা করবেন। জীবনের সকল চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে যদি কাজ করতে পারেন, তাহলে মানুষের যে আস্থা ও বিশ্বাস করা যাবে। এটাই একজন রাজনীতিবিদের বড় পাওয়া। তাই প্রতিটা নেতাকর্মীকে জাতির আদর্শে কাজ করতে হবে।
- ঢাকা উত্তরে মশা নির্মূলে বিশেষ কর্মসূচি উদ্বোধন
- রোহিঙ্গা নয়, ভাসানচরে জায়গা হবে গৃহহীনদের: ড. মোমেন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের তো কোনো সীমাই নাই। এত বেশি উন্নয়ন আমরা করেছি। আপনাদের মনে আছে, আমাদের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী আন্দোলন করেছিলেন কর্ণফুলী নদী দিয়ে টানেল করা। আজকে সেই টানেল আমরা নির্মাণ করেছি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য তিনি বেঁচে নেই, দেখে যেতে পারলেন না। ঠিক সেভাবে সারাটা বাংলাদেশের সববিভাগেই উন্নয়ন করে যাচ্ছি। এমনকি বগুড়ায়ও, যে বগুড়ায় আমাদের ভোটও দেয়নি, সেই বগুড়ারও যত উন্নয়ন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই হয়েছে। বগুড়ার লোক থাকতেও অত উন্নয়ন হয়নি। যতটুকু আমরা করতে পেরেছি। ঠিক সেভাবে যশোর, বাগেরহাট, গাইবান্ধায় হয়েছে। এক সময় গাইবান্ধায় দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকতো, আজকে সেই গাইবান্ধার অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। আর ঢাকার উন্নয়নের জন্য আমরা ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিটা উন্নয়নের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামের মানুষ যে সমান সুবিধাগুলো পায়। সেখানে যেন উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছায়।