হোক সাধারণ প্রস্তুতি ম্যাচ, তবু প্রতিপক্ষ ভারত বা পাকিস্তান হলে বাংলাদেশের যেকোনো ম্যাচই পায় বাড়তি আগ্রহ, ছড়িয়ে যায় বাড়তি উত্তাপ। তেমনই এক ম্যাচে পাকিস্তান নারী ক্রিকেট দলকে হেসেখেলে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হবে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্ব। তার আগে আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি পর্বের শেষদিনে মাঠে নেমেছিল অংশগ্রহণকারী দলগুলো। দিনের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নারী ক্রিকেট দল।
এ ম্যাচে জাহানারা আলমের করা দুর্দান্ত শেষ ওভারে ৫ রানের রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ দল ৮ উইকেট হারিয়ে করেছিল ১১১ রান। জবাবে ১০৬ রান করতেই সবকয়টি উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান।
১১২ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে পাকিস্তান। তবু একপ্রান্ত আগলে রেখে দারুণ ব্যাট করছিলেন দলের ওপেনার ও সাবেক অধিনায়ক জাভেরিয়া খান।
অপরপ্রান্তে আয়েশা নাসিম (৩ বলে ১), অধিনায়ক বিসমাহ মাহরুফ (৫ বলে ২) ও উমাইমা সোহেলকে (৪ বলে ৪) সাজঘরে পাঠিয়ে মাত্র ২৩ রানেই ৩ উইকেট তুলে নেন সালমা-জাহানারারা।
চতুর্থ উইকেটে ২৭ রান যোগ করেন দুই সাবেক অধিনায়ক নিদা দার ও জাভেরিয়া। দলীয় পঞ্চাশ পূরণ হতেই নিদাকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান পান্না ঘোষ। টিকতে পারেননি ইরাম জাভেদ (১৩ বলে ৫), পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন দলীয় ৫৯ রানের মাথায়।
তখনও ৫০ বলে ৫৫ বলে রান করতে হতো পাকিস্তানকে। আশার আলো হয়ে টিকে ছিলেন জাভেরিয়া খান। ইনিংসের ১৬তম ওভারে জাভেরিয়াসহ দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে তুলে দেন অফস্পিনার খাদিজা তুল কুবরা। নিজের ৪ ওভারের স্পেলে মাত্র ১১ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন খাদিজা।
আউট হওয়ার আগে জাভেরিয়া ৫ চারের মারে ৩৪ বলে করেন ৪১ রান। তার বিদায়ে ম্যাচ থেকে ছিটকেই যায় পাকিস্তান। তবে ইনিংসের ১৯তম ওভারের শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন ফাতিমা সানা। অপরপ্রান্তে ২৩ বলে ১৮ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন আলিয়া রিয়াজ।
শেষ ওভারে তাদের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১০ রান। প্রথম বলে দুই রান নেন আলিয়া। দ্বিতীয় বলেই তাকে বোল্ড করে দেন জাহানারা। তৃতীয় বলে আবার দুই রান নেন শেষ ব্যাটসম্যান ডিয়ানা বাইগ। চতুর্থ বলে আবারও সরাসরি বোল্ড করেন জাহানারা। ফলে ৫ রানের জয় পায় বাংলাদেশ।
বল হাতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন জাহানারাই। নিজের ৩.৪ ওভারের স্পেলে ২২ রান খরচ করেন তিনি। এছাড়া সালমা ২৮ রানে ২, খাদিজা ১১ রানে ৩ ও পান্না ঘোষ ১০ রানে নিয়েছেন ১টি উইকেট।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগ্রেস অধিনায়ক সালমা খাতুন। তার দলের বড় সংগ্রহের সম্ভাবনার মাঝে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে যায় রানআউট। টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন রানআউটের ফাঁদে পড়ে। না হয় দলীয় সংগ্রহ ১১১ রানের চেয়েও বেশি হতে পারতো।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেছেন ওপেনার মুর্শিদা খাতুন। দলীয় ৮৩ রানের মাথায় চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তিনি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, তিনিও থেমেছেন রানআউট হয়ে। নিজের ইনিংসে ৬টি চার মারেন মুর্শিদা।
এছাড়া ফারজানা হক ৩১ বলে ২১, নিগার সুলতানা ১৩ এবং রিতু মণি ১৭ বলে ১৪ রান করেন। দুই অঙ্কে যেতে পারেননি দলের অন্য কেউ। তারকা অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদ আউট হন ৯ বলে ৬ রান করে।
বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশ রয়েছে ‘এ’ গ্রুপে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও শ্রীলঙ্কা। টুর্নামেন্টে অন্য দলগুলোর শক্তিমত্তা বিবেচনায় বাংলাদেশ দলকে আন্ডারডগই বলা চলে। ফাইনাল বা সেমিফাইনাল পরে, গ্রুপপর্বে এক-দুইটি জয় পেলেও সেটি ধরা হবে সাফল্য হিসেবেই।
দলের অধিনায়ক সালমা খাতুনেরও জানা আছে এটি। তাই তিনি মূলত স্মার্ট ক্রিকেট খেলার লক্ষ্য নিয়েই পাড়ি জমিয়েছেন অস্ট্রেলিয়াতে। বাস্তবতা মাথায় রেখেই সালমার লক্ষ্য, অন্তত এক-দুইটি জয়। তবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আবার আশাবাদী এ দল নিয়ে। তার বিশ্বাস আছে, নারী দল আরও সাফল্য এনে দেবে।
আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে লড়বে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের নারীরা। আর বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ২৪ ফেব্রুয়ারি। ম্যাচটি হবে পার্থের ওয়াকা গ্রাউন্ডে। গ্রুপপর্বে পরের তিন ম্যাচ যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া (২৭ ফেব্রুয়ারি, ক্যানবেরা), নিউজিল্যান্ড (২৯ ফেব্রুয়ারি মেলবোর্ন) এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে (২ মার্চ, মেলবোর্ন)।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নারী দল
সালমা খাতুন (অধিনায়ক), রুমানা আহমেদ (সহ-অধিনায়ক), জাহানারা আলম, শামীমা সুলতানা, মুরশিদা খাতুন হ্যাপি, আয়েশা রহমান, নিগার সুলতানা জ্যোতি, সানজিদা ইসলাম, খাদিজাতুল কুবরা, পান্না ঘোষ, ফারজানা হক পিঙ্কি, নাহিদা আক্তার, ফাহিমা খাতুন, রিতু মনি, শুভানা মোস্তারি।
স্ট্যান্ডবাই : শায়লা শারমিন, সুরাইয়া আজমিম, লতা মণ্ডল।