দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের কারণে আন্ডারওয়ার্ল্ডে অস্থিরতা তৈরি হয়। নতুন করে আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়েছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান। সে লক্ষ্যে গত ১২ জানুয়ারি তার নির্দেশনা ও সহযোগিতায় দেশে আসেন অন্যতম সহযোগী মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাকিল ওরফে শাকিল মাজহার (৩৫)।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।
শনিবার ভোরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে শাকিলকে গ্রেফতার করে র্যাব-২ এর একটি দল। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন ও ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, শাকিল চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি সিটি নির্বাচন সামনে রেখে দুবাই থেকে দেশে আসেন। মূলত আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের নির্দেশ ও সহযোগিতায় দেশে নতুন করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা করে আন্ডারওয়ার্ল্ডের নেতৃত্ব দিতে তার দেশে আসা।
রোগী সেজে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হন শাকিল। সেখানে ভর্তির উদ্দেশ্য, হাসপাতালে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সৃষ্টি করে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া। এজন্য তিনি বেশ কয়েকবার হাসপাতালের সিসিইউর সামনে ঘোরাফেরা করেন। যেখানে চিকিৎসাধীন গ্রেফতার যুবলীগের সাবেক নেতা সম্রাট।
শাকিলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০১৬ সালের জুন মাসে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সম্পাদক রাজীব হত্যার মামলায় নাম আসার চারদিন পর শাকিল চীনে চলে যান। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে বসবাস করেন এবং কার্গো সার্ভিসে কাজ করেন। ২০১৮ সালে চীন থেকে দুবাই চলে যান এবং ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দুবাই অবস্থান করেন। সেখানেই জিসানের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তার সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে।
শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, জিসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো রয়েছে তা চলমান।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ (৪৯) দুবাইয়ে গ্রেফতার হয়েছেন। পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. সোহেল রানা এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
জিসানের বিরুদ্ধে খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, বিস্ফোরকদ্রব্য রাখাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
- আরও পড়ুন >> আরভিনের সেঞ্চুরি: শেষ বিকেলটা বাংলাদেশের
জিসান ১৯৭০ সালে ঢাকার খিলগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। বনানী, গুলশান, বাড্ডা, মতিঝিলসহ রাজধানীর কয়েকটি এলাকার ত্রাস ছিলেন জিসান। ২০০৩ সালে তিনি দেশ ছাড়েন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পলাতক ছিলেন।
প্রায় দুই দশক আগে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় জিসানের নামও রয়েছে। জিসান দুবাইয়ে গ্রেফতার হওয়ার বিষয়ে একটি প্রেসনোট দেয় পুলিশ সদর দফতর। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের পুলিশ সদরদ ফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) উদ্যোগে ও এনসিবি দুবাইয়ের (ইন্টারপোল) সহযোগিতায় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এনসিবি দুবাই ৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
আইনি প্রক্রিয়া শেষে জিসানকে দ্রুত বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানায় পুলিশ সদর দফতর।