দেশের বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে তা আরও কমে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশে নেমেছে। এ প্রবৃদ্ধি মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বরে ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ ঋণপ্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছিল। ডিসেম্বরের প্রবৃদ্ধি গত ৩৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৫ সালে এমন পরিস্থিতি ছিল।
এদিকে খরচের তুলনায় সরকারের আয় কম হওয়ায় ব্যয় ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে ব্যাংকের ওপর ঝুঁকছে সরকার। বাজেটের ঘাটতি মেটাতে অস্বাভাবিক হারে ঋণ নেয়া হচ্ছে।
ব্যয় ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার চিন্তা করে সরকার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের সাড়ে সাত মাসেই নির্ধারিত ওই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ইতোমধ্যে সরকার ঋণ নিয়েছে ৫২ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার প্রতি বছর বাজেটের ব্যয় ব্যবস্থাপনার জন্য অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক খাত থেকে অর্থ (টাকা) ধারের লক্ষ্য ঠিক করে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। ফলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ব্যয় জোগাতে ব্যাংকের ঋণের প্রতি ঝুঁকেছে সরকার। তবে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে সরকারের ঋণ বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়ে যাবে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আরও কমে যাব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ৫২ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে সাত হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়েছে ৪৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংক খাত থেকে নেয়া সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের স্থিতি বা পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা নেয়ার কথা। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম সাড়ে সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১১০ শতাংশে পৌঁছেছে।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, রাজস্ব আদায় কম। নানা শর্তের কারণে সঞ্চয়পত্রের বিক্রিও কমেছে। ফলে বাজেটের ব্যয় ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে সরকার এখন বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে।
‘এভাবে ঋণ নেয়া অব্যাহত থাকলে বেসরকারি বিনিয়োগ ব্যাহত হবে’— এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘এমনিতে বেসরকারি ঋণ অনেক কমে গেছে। ফলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিও কমে যাবে। সরকারের যে লক্ষ্য আছে, তা অর্জনও ব্যাহত হবে।’
এদিকে অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সঞ্চয়পত্র কেনায় নিয়মকানুন কড়াকড়ি করেছে সরকার। যার প্রভাবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট সংগ্রহ মাত্র পাঁচ হাজার ৪৩৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। কিন্তু এ অর্থবছর সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২৭ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল সরকার। সংগ্রহের হার প্রায় ২০ শতাংশ। গত ১০ অর্থবছরের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রির সর্বনিম্ন অঙ্ক এটি।