‘রাজাকার শর্ষিণার পীর এবং রইজ উদ্দিনের স্বাধীনতা পদক কেড়ে নিতেই হবে’

মত ও পথ প্রতিবেদক

শর্ষিণার পীর আবু সালেহ (বামে) এবং রইজ উদ্দিন (ডানে)
শর্ষিণার পীর আবু সালেহ (বামে) এবং রইজ উদ্দিন (ডানে)। ছবি : সংগৃহিত

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ আর কয়েক লক্ষ নারীর সম্ভ্রম জড়িয়ে আছে এই পদকের সঙ্গে। অথচ এই সর্বোচ্চ পদক পেয়েছেন একাত্তরের ঘৃণ্য রাজাকার শর্ষিণার পীর আবু সালেহ! আর এবার সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন রইজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি, যাকে কেউ চেনেই না! ভুলভাল শব্দে লেখা এই ব্যক্তির কবিতার বই দেখে লোকে এখন ভিরমি খাচ্ছেন! তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন, যদিও সার্টিফিকেট অনুযায়ী একাত্তরে তার বয়স ছিল মাত্র ১১!

এই দুই বিতর্কিত ব্যক্তির স্বাধীনতা পুরস্কার কেড়ে নেওয়ার দাবি উঠেছে দেশের বিভিন্ন মহল থেকে। প্রখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচও নিজের ফেসবুকে এই দাবি তুলেছেন। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা লিখেছেন, ‘ একাত্তরের ভয়াবহ পিশাচ শর্ষিণার ‘পীর’ আবু সালেহকে দেওয়া স্বাধীনতা ও একুশে পদক আর ২০২০ এর ‘মহাকবি’ রইজ উদ্দিনদের স্বাধীনতা পদক কেড়ে নিতেই হবে। জাতীয় পাপ স্খলনের এটাই সময়। এর কোন বিকল্প নেই।’

৫ জানুয়ারি ১৯৭২ দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার রিপোর্ট।

উল্লেখ্য, নরঘাতক টিক্কা খানের আমলে ঢাকার ফরাসগঞ্জের লালকুঠিতে যারা রাজাকার বাহিনী গঠন করা, প্রতিটি মাদ্রাসাকে রাজাকার ক্যাম্পে পরিণত করা এবং সকল মাদ্রাসার ছাত্রকে রাজাকার ও পুলিশ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় শর্যিণার পীর তাদের অন্যতম। একাত্তরের ১২ই নবেম্বর ৫ শতাধিক রাজাকার, দালাল ও সাঙ্গপাঙ্গসহ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে তাকে আটক করা হয়। অথচ এই রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধী ঘৃণ্য দালাল আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহকে ১৯৮০ সালে জনসেবা এবং ১৯৮৫ সালে শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে দু’দুবার স্বাধীনতা পদক প্রদান করে!

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটির ২৫৬ পৃষ্ঠায় শর্ষিণার পীর সম্পর্কে লেখা আছে।

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে শর্ষিণার পীর সম্পর্কে লিখেছেন, ‘জামান সাহেব ও মুসলিম লীগ যখন দেখতে পারলেন তাদের অবস্থা ভালো না, তখন এক দাবার ঘুঁটি চাললেন। অনেক বড় বড় আলেম, পীর ও মওলানা সাহেবদের হাজির করলেন। গোপালগঞ্জে আমার নিজের ইউনিয়নে পূর্ব বাংলার এক বিখ্যাত আলেম মওলানা শামসুল হক সাহেব জন্মগ্রহণ করেছেন। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে খুবই শ্রদ্ধা করতাম। তিনি ধর্ম সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন। আমার ধারণা ছিল, মওলানা সাহেব আমার বিরুদ্ধাচরণ করবেন না। কিন্তু এর মধ্য তিনি মুসলিম লীগে যোগদান করলেন এবং আমার বিরুদ্ধে ইলেকশনে লেগে পড়লেন। ঐ অঞ্চলের মুসলমান জনসাধারণ তাকে খুবই ভক্তি করত। মওলানা সাহেব ইউনিয়নের পর ইউনিয়নে স্পিড-বোট নিয়ে ঘুরতে শুরু করলেন এবং এক ধর্ম সভা ডেকে ফতোয়া দিলেন আমার বিরুদ্ধে যে, ‘আমাকে ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না, ধর্ম শেষ হয়ে যাবে।’ সাথে শর্ষিণার পীর সাহেব, বরগুনার পীর সাহেব, শিবপুরের পীর সাহেব, রহমতপুরের শাহ সাহেব সকলেই আমার বিরুদ্ধে নেমে পড়লেন এবং যত রকম ফতোয়া দেওয়া যায় তাহা দিতে কৃপণতা করলেন না। দুই চার জন ছাড়া প্রায় সকল মওলানা, মৌলভী সাহেবরা এবং তাদের তালবেলেমরা নেমে পড়ল।’

অন্যদিকে, ২০২০ স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত রইজ উদ্দিনকে কেউ চেনেনই না। তার সাহিত্যকর্মের সঙ্গেও কেউ পরিচিত নন। পুরস্কার ঘোষণার পর তার বইয়ের কিছু পাতার ছবি সোশ্যাল সাইটে ঘুরছে। যার ভাষ অতি উদ্ভট, উত্তেজক এবং ভুলভাল।

বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফোকলোর বিশারদ অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বিস্ময় প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এবার সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন রইজউদ্দীন, ইনি কে? চিনি না তো। নিতাই দাসই বা কে! হায়! স্বাধীনতা পুরস্কার!’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে