ট্রাম্পের ভারত সফরে গুজরাট দাঙ্গার স্মৃতি ফেরাচ্ছে দিল্লি, নিহত ৭

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সিএএ বিরোধীদের ওপর সমর্থকদের হামলা
সিএএ বিরোধীদের ওপর সমর্থকদের হামলা। ছবি : রয়টার্স

সংশোধিত নাগরিক আইন (সিএএ) নিয়ে আবার উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সপরিবারে ভারত সফরের মধ্যে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজধানী শহর। সোমবার নাগরিকত্ব  আইনের পক্ষ-বিপক্ষে এই হাঙ্গামায় পুলিশসহ সাতজন নিহত হয়েছেন।  এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তর-পূর্ব দিল্লির একাধিক জায়গায় নতুন করে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে।

সোমবার দুই দিনের সফরে ভারতে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।  ট্রাম্পের সফরের প্রথম দিনই ঘটল এই সংঘর্ষ। তাতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার। শান্তি বজায় রাখতে ইতিমধ্যে বিক্ষোভকারীদের আহ্বান জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। দুই পক্ষকে শান্ত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজলও।

universel cardiac hospital

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মৌজপুরে পাথরের আঘাতে পুলিশের হেড কনস্টেবল রতন লালের মৃত্যু হয়। এর পর বিকেলে চাঁদবাগে ফুরকান আনসারি (৩২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। রাতে গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে মারা যান শাহিদ নামে এক যুবক। অজ্ঞাতপরিচয় আরও এক জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। সূত্রের খবর, আহত হয়ে তেগবাহাদুর হাসপাতালেই ভর্তি অন্তত ২০ জন।

শনিবার রাত থেকে শাহিন বাগের ধাঁচে বিক্ষোভ চলছে জাফরাবাদের রাস্তায়। কয়েক শ মহিলা জড়ো হন সেখানে। তা নিয়ে রবিবার পুলিশকে হুমকি দিয়েছিলেন বিজেপির কপিল মিশ্র। তিন দিনের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের না হঠালে তারাও পাল্টা রাস্তায় নামবেন। সেই নিয়ে রবিবারই  তেতে উঠেছিল জাফরাবাদ।

গতকাল দুপুরেও তা নিয়ে বিক্ষোভ চলছিল গোকুলপুরি, ভজনপুরা এলাকায়। তখনই সিএএ-র সমর্থনে একদল মানুষ সেখানে এসে হাজির হয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে দিতে সিএএ বিরোধী মিছিলের সামনে হাজির হয় দলটি।

তাতে রাস্তার ওপরই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। একে অপরকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইট ছুড়তে থাকে। বেশ কিছু গাড়ি ও দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি একটি পেট্রোল পাম্পেও আগুন ধরানো হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তাতে সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করে।

ক্ষোভ যাতে চরম আকার ধারণ না করে, তার জন্য ইতিমধ্যেই জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবরপুর, জোহরি এনক্লেভ এবং শিব বিহার মেট্রো স্টেশনের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোনো ট্রেন দাঁড়াবে না। ওই এলাকায় ১৪৪ ধারাও জারি হয়েছে।

এ দিনের ঘটনার জন্য বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রকে দায়ী করেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। রবিবার  জাফরাবাদে অশান্তির পর থেকে টুইটারে একাধিক মন্তব্য পোস্ট করেছেন কপিল মিশ্র। কোথাও তিনি লেখেন, ‘দিল্লিতে দ্বিতীয় শাহিন বাগ হতে দেব না।’ এই ধরনের মন্তব্য করে কপিল মিশ্রই জাফরাবাদে হিংসায় মদত জুগিয়েছেন বলে এ দিন অভিযোগ করেছেন ওয়াইসি।

রোববার বিকেল থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অশান্তির জেরে জাফরাবাদ অঞ্চলের বহু মুসলিম পরিবার ঘরে তালা ঝুলিয়ে মহল্লা ছেড়েছেন। জাফরাবাদ, মৌজপুর, বাবরপুর, সিলমপুরের অনেকে বাড়ির সামনে গেরুয়া পতাকা ঝুলিয়ে দিয়েছেন, যাতে হামলা না হয়। ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার সময় আহমেদাবাদেও এই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল।

জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবরপুর তো বটেই, তার সঙ্গে আরও তিনটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে ওই লাইনে মেট্রো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। মঙ্গলবার পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিল্লির সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

এরই মধ্যে সোমবার রাতে আগুন লাগানো হয় গোকুলপুরীর টায়ার বাজারের একের পর এক দোকানে। দিল্লির আপ সরকারের তিন মন্ত্রী এবং বহু বিধায়ক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানাতে এবং পুলিশি সক্রিয়তার দাবি নিয়ে বেশি রাতে উপরাজ্যপালের বাড়ির সামনে ধর্না দেন। কারণ দিল্লির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ভার অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা বলেছেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। যথেষ্ট বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে’।

মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপরাজ্যপালের কাছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আর্জি জানিয়েছেন। সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কাও শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষেণ রেড্ডি দাবি করে বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের সময় ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে’।

কথাটা পুরোপুরি অস্বীকার করছেন না জাফরাবাদের বাসিন্দারা। কিন্তু অশান্তির জন্য তাদের অভিযোগের আঙুল বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের দিকে। জাফরাবাদের বাসিন্দা খালিদ আখতার বলেন, ‘এখানে গত দু’মাস ধরে রাস্তার ধারের মাঠে মহিলারা সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে ধর্নায় বসেছিলেন। কেউ তাদের সঙ্গে কথা বলতে আসেনি। আমরা রাস্তা অবরোধ করিনি। তাই কেউ মাথায় ঘামায়নি’।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে