১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণের সাহসী সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আমানত শেখ এবং মা জেন্নাতুন্নেছা (মতান্তরে জেন্নাতা খানম)।
নূর মোহাম্মদ বাল্যকালে বাবা ও মাকে হারান। পড়েছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। তার জন্মস্থান মহিষখোলার নাম পরিবর্তন করে ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ ‘নূর মোহাম্মদ নগর’ করা হয়।
নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগদান করেন। বর্তমানে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি) নামে প্রতিষ্ঠিত। দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই যশোর সেক্টরে বদলি হন। পরে ল্যান্সনায়েক পদে পদোন্নতি পান নূর মোহাম্মদ। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এ সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর এসএ মঞ্জুর।
১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন নূর মোহাম্মদ। যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত হন।
নূর মোহাম্মদ শেখের দ্বিতীয় স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা (৭৯) বার্ধক্যজনিত কারণে ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। এর আগে ১৯৯০ সালে নূর মোহাম্মদ শেখের প্রথম স্ত্রী তোতা বিবি মারা যান। বর্তমানে ছেলে গোলাম মোস্তফা কামাল ও তিন মেয়ে নড়াইল এবং যশোরে বসবাস করছেন।
নূর মোহাম্মদের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নূর মোহাম্মদ ট্রাস্ট ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নূর মোহাম্মদ নগরে আজ (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে কোরআনখানি, শোভাযাত্রা, স্মৃতিস্তম্ভে গার্ড অব অনার প্রদান ও পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের স্মৃতি সংরক্ষণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা।